Sunday, August 23, 2020

অসুখী মানুষের ১০টি অভ্যাস যা সবার জন্য বর্জনীয়


মানুষ যখন অসুখী থাকে তখন বহু বিষয় নিয়েই তার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। আর এটি মূলত কোনো পরিস্থিতির কারণে নয় বরং অভ্যাসের কারণেই হয়ে থাকে। কয়েকটি অভ্যাস থেকেই তাদের এ বিষয়টি বোঝা সম্ভব। এ লেখায় তুলে ধরা হলো অসুখী মানুষদের তেমন ১০টি অভ্যাস। ১. ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা বর্তমান অবস্থা নিয়ে কখনোই সন্তুষ্ট হয় না অসুখী মানুষেরা। তারা ধারণা করে ভবিষ্যতে হয়ত কখনো পরিস্থিতি পাল্টাবে। আর তখন সব দুঃখ ও অসন্তুষ্টি দূর হয়ে যাবে। এ কারণে তারা অনাগত সেই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকে। যদিও বাস্তবে তেমন দিন আর আসে না। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা সর্বদা বর্তমানে আপনার যা আছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট হতে বলেন। ২. বহু জিনিসের পেছনে ছোটা অত্যন্ত আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে যারা জীবনের প্রথম অংশ কাটায় তারা পরবর্তীতে আয় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সুখও কিছুটা বাড়াতে সক্ষম হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে তারা বহু বিলাসপণ্য সংগ্রহ করা শুরু করে। এতে এক পর্যায়ে আবার তারা আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। আর এ কারণে তাদের মনের শান্তি ও সন্তুষ্টি আবার চলে যায়। ৩. বাড়িতে থাকা অসুখী মানুষেরা সাধারণত অন্য মানুষদের এড়িয়ে চলে। আর এ কারণে তাদের সামাজিকতায়ও ঘাটতি তৈরি হয়, যা আরও নানা সমস্যা তৈরি করে। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো তাদের মুড। মানসিক অবস্থা খারাপ থাকলে সবার সঙ্গে মেশার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। যদিও বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে অসামাজিক না হতে বলেন। ৪. নিজেকে পরিস্থিতির শিকার মনে করা অসুখী মানুষ সর্বদা নিজেকে পরিস্থিতির শিকার বলে মনে করে। তাদের হাতে নিজের এ পরিস্থিতি সামলানোর কোনো উপায় নেই এবং কিভাবে যে তা হয়ে গেছে, এমন একটা ধারণা থাকে। এ ধারণার কারণে এরা নিজের পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য কোনো চেষ্টাও করে না। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধারণা ভুল। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তা পাল্টানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে নিজেকেই। ৫. হতাশা অসুখী হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হতাশা। এটি মূলত মুড কিংবা সাময়ীক মানসিক পরিস্থিতি নয়, এটি তৈরি হয় আরও বড় আকারে। হতাশার কারণে মানুষ নিজেই নিজের মাঝে একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি তৈরি করে। এরপর যে কোনো পরিস্থিতিতেই মানুষ ভালো নয় বরং মন্দ বিষয়টি আশা করে। ৬. অভিযোগ এটি অসুখী মানুষের আরেকটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য যে, তারা কখনোই সন্তুষ্ট হয় না। নানা বিষয় নিয়ে তারা ক্রমাগত অভিযোগ করতে থাকে। যারা ক্রমাগত অভিযোগ করতে অভ্যস্ত তারা নিজেই এ পরিস্থিতি তৈরি করে। অন্যরাও তাদের অভিযোগের কারণে অতিষ্ট হয়ে পড়ে। ৭. নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা বাজে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। কিন্তু আপনি বিষয়টিকে কেমন দৃষ্টিতে দেখছেন তা গুরুত্বপূর্ণ। একটি বাজে বিষয় যখন কোনো একজন নেতিবাচক মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে তখন তারা সে দিনটিকেই বাজে হিসেবে দেখে। অনেকে আবার বছরটিকেও বাজে মনে করতে পারে এমনকি জীবনটাকেও মূল্যহীন মনে করতে পারে। যদিও ইতিবাচক মানুষ সে বাজে বিষয়টিকে সেভাবে পাত্তা না দিয়ে বরং তাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখতে চায়। ৮. সমস্যা লুকিয়ে রাখা অনেক অসুখী মানুষ তাদের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা লুকিয়ে রেখে প্রকাশ করতে চায় যে, সবকিছু স্বাভাবিক আছে। যদিও পরবর্তীতে এ সমস্যা যখন আরও বেড়ে যায় তখন তা নিজে থেকেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আর এতে তারা নিজেকে অবস্থার শিকার হিসেবেই বর্ণনা করে। ৯. উন্নতি না হওয়া অসুখী মানুষ প্রায়ই নিজের উন্নতির জন্য কোনো চেষ্টা করে না। এতে তাদের উন্নতির সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের দেখা যায় আরাম করে পরিস্থিতি পাল্টাবে এমন আশায় দিন গুনতে। যদিও চেষ্টা না করার কারণে পরিস্থিতিও পাল্টায় না। ১০. অন্যের সঙ্গে তুলনা অন্যের সঙ্গে তুলনা করার পাশাপাশি অসুখী মানুষকে সর্বদা হিংসা করতে দেখা যায়। তারা অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করে এবং অন্যের উন্নতিতে মনে দুঃখ পায়। এ কারণে তাদের মানসিক অবস্থাও ক্রমে খারাপ হয়ে যায়। --ফোর্বস অবলম্বনে ওমর শরীফ পল্লব

Saturday, August 22, 2020

সকাল-সন্ধ্যা বিপদমুক্ত থাকার দোয়া


আমরা সারাদিনই কোনো না কোনো বিপদে পড়ি। ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের বিপদ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যখন বিপদে পরি তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো গতি থাকেনা। কারণ আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি আমাদের বিপদে পতিত করেন, আবার তিনিই আমাদের বিপদ থেকে মুক্ত করতে পারেন। বিপদ থেকে মুক্তি পেতে সকাল-সন্ধ্যা নিম্ন দোয়াটি পরুন। আল্লাহ অবশ্যই সহায় হবেন।

প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় এই দোয়াটি তিনবার পড়লে আর কোনো ধরণের ক্ষতি হবে এমনটি হতে পারে না।
এক বর্ণনায় আছে, সকালে পড়লে সন্ধ্যা পর্যন্ত অতর্কিত কোনো বিপদে সে আক্রান্ত হবে না। আর সন্ধ্যায় পড়লে পরদিন সকাল পর্যন্ত অতর্কিত কোনো বিপদে সে আক্রান্ত হবে না। [আবু দাউদ:৫০৯০,তিরমিজি: ৩৩৮৮,ইবনে মাজাহ:৩৮৬৯]

আরবি দোয়া : একবার
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
* বাংলা উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়া দুররু মাসমিহি শাইয়ূন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।
* অর্থ : [আমি আমার দিন বা রাতের সূচনা করছি] ওই আল্লাহর নামে যার নামের সঙ্গে আসমান জমিনের কোনো কিছু কোনো ধরণের ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বাজ্ঞ।
H.M Arif hossain


Wednesday, August 19, 2020

আজ আমি আপনার কাছ থেকে কী শিখতে পারি?


উপরের চিত্রটি লক্ষ্য করুন, আর ভাবতে থাকুন!

বাম পাশ থেকে

আজ আমি আপনার কাছ থেকে কী শিখতে 

✏ ১ম জন - সারাজীবন শুধুমাত্র টাকার পিছনেই ছুটছেন। যার ফলে, টাকা উপার্জন করতে করতে তিনি এখন পৃথিবীর সৌন্দর্যটাই উপভোগ করতে পারছেন না।।

✏ ২য় জন- শুধুমাত্র শিক্ষা অর্জন করার কারনে পৃথিবীর পরিপূর্ণ সৌন্দর্যটাই উপভোগ করতে পারছেন না।।

✏ ৩য় জন - অপরদিকে, ইনি শিক্ষা ও অর্থ উপার্জন দুটা একসাথে করছেন তাই পৃথিবীর আসল সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারছেন।

✏ ৪র্থ জন- শেষ ব্যাক্তিটি শিক্ষা এবং অর্থ কোন কিছুর দিকে তিনি ছুটেননি। যার ফলে তিনি কিছু দেখার পরিবর্তে এখন পৃথিবীতে শুধু অন্ধকারই দেখছেন।

তার মানে, আমরা বুঝতে পারি শুধুমাত্র টাকা কিংবা জ্ঞানের পিছনে দৌঁড়িয়ে পৃথিবীর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা অসম্ভব। তবে, দুটোর সমন্বয়ে পৃথিবীর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা একেবারেই সম্ভব!

H.M Arif Hosaain 

Saturday, August 15, 2020

যে ১৪টি আমলে রিজিক বাড়ে


যে ১৪টি আমলে রিজিক বাড়ে

লিখেছেনঃ আলী হাসান তৈয়ব
(তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও)

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে।
মুসলিম মাত্রেই বিশ্বাস করেন যে তার আয় ও উপার্জন, জীবন ও মৃত্যু, এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায় যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু। আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন,

﴿هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ ذَلُولٗا فَٱمۡشُواْ فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُواْ مِن رِّزۡقِهِۦۖ وَإِلَيۡهِ ٱلنُّشُورُ ١٥﴾ [الملك: ١٥]

‘তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।’ {সূরা আল-মুলক, আয়াত : ১৫}

আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন ও হাদীস রোমন্থিত ১৪টি আমলের কথা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

প্রথম আমল : তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা
আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তাঁর নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‌

﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا ٣ ﴾ [الطلاق : ٢، ٣]

‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ {সূরা আত-তালাক, আয়াত : ২-৩}

অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে।

দ্বিতীয় আমল : তাওবা ও ইস্তেগফার করা
অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,

﴿ فَقُلۡتُ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارٗا ١٠ يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا ١١ وَيُمۡدِدۡكُم بِأَمۡوَٰلٖ وَبَنِينَ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ جَنَّٰتٖ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ أَنۡهَٰرٗا ١٢ ﴾ [نوح: ١٠، ١٢]

‘আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। {সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২}

হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».

‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ [আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১][1]

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« مَنْ أَكْثَرَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ».

‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ [বাইহাকী : ৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।]

তৃতীয় আমল : আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন : আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন,

« مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ».

‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ [বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯]

চতৃর্থ আমল : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে। [তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি ‘হাসান’ সহীহ।)]

পঞ্চম আমল : আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা
আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বাড়ে বৈ কি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ قُلۡ إِنَّ رَبِّي يَبۡسُطُ ٱلرِّزۡقَ لِمَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦ وَيَقۡدِرُ لَهُۥۚ وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ٣٩ ﴾ [سبا: ٣٩]

‘বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযকদাতা।’ {সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯}

ষষ্ঠ আমল : বারবার হজ-উমরা করা
হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।’ [তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১]

সপ্তম আমল : দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা
মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ [বুখারী : ২৮৯৬]

অষ্টম আমল : ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়া
আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ [তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭]

নবম আমল : আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা
আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াত থেকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ۞وَمَن يُهَاجِرۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ يَجِدۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُرَٰغَمٗا كَثِيرٗا وَسَعَةٗۚ وَمَن يَخۡرُجۡ مِنۢ بَيۡتِهِۦ مُهَاجِرًا إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ يُدۡرِكۡهُ ٱلۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ أَجۡرُهُۥ عَلَى ٱللَّهِۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٠٠ ﴾ [النساء : ١٠٠]

‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১০০}

আয়াতের ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহুদ বলেন, স্বচ্ছলতা অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা।

দশম আমল : আল্লাহর পথে জিহাদ
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে। গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মাধ্যমে সংসারে প্রাচুর্য আসে। যেমন ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।’ [মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান : ১৯৭৮৩]

একাদশ আমল : আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
সাধারণভাবে আল্লাহ যে রিজিক ও নিয়ামতরাজি দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর স্তুতি গাওয়া। কারণ, শুকরিয়ার ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ ٧ ﴾ [ابراهيم: ٧]

‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৭}

আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর কোনো সীমা-পরিসীমা নাই।

দ্বাদশ আমল : বিয়ে করা
আজকাল মানুষের দুনিয়ার প্রাচুর্য ও বিলাসের প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে প্রয়োজন সত্ত্বেও বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে এ কথা যে বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তো তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٣٢ ﴾ [النور : ٣٢]

‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩২}

উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুমা বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।’

ত্রয়োদশ আমল : অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া এবং তার কাছে দু‘আ করা
রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাই রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ﴾ [غافر: ٦٠]

‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ {সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত : ৬০}

এ আয়াতে আল্লাহ দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন। যাবৎ না তা কবুলে পথে কোনো অন্তরায় না হয়। যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি এবং কবুলকে খানিক বিলম্বিতকরণ। আল্লাহর কাছে দু‘আয় বলা যেতে পারে,
‘হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক দান করুন, আপনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র সুপ্রশস্ত রিজিক চাই। হে ওই সত্তা, দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কমতি হয় না। হে আল্লাহ, আমাকে আপনি আপনার হালাল দিয়ে আপনার হারাম থেকে যথেষ্ট করে দিন আর আপনার দয়া দিয়ে আপনি ছাড়া অন্যদের থেকে যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। আর যা আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।’

অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন। [তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮]

চতুর্দশ আমল : গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর সদা অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করে যাওয়া।
গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয় যেমন পূর্বোক্ত আয়াতগুলো থেকে অনুমান করা যায়।
তবে সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এদেন অবস্থা দেখে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ بَلۡ تُؤۡثِرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا ١٦ وَٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ١٧ ﴾ [الاعلى: ١٦، ١٧]

‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।’ {সূরা আল-আ‘লা, আয়াত : ১৬-১৭}

আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমন : হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ‘স রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘ওই ব্যক্তি প্রকৃত সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাসও নয়) পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন। [মুসলিম : ২৪৭৩; তিরমিযী : ২৩৪৮; আহমদ : ৬৫৭২]

পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড় করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক দান করেন। তিনি যেন আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন। আমীন।

[1]. (শায়খ উসাইমীন বলেন, সনদগত দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল কিন্তু এর মর্ম ও বক্তব্য সহীহ বা সঠিক। কুরআনের আয়াত ও হাদীসে এই বক্তব্যের সমর্থন বিদ্যমান। এই হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বিন বায বলেন, সর্বোপরি হাদীসটি তারগীব ও তারহীব তথা মানুষকে আখিরাতের আগ্রহ বা ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। কারণ, এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহে একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়। [ফাতাওয়া নূর আলাদ-দারবি (হাদীসের ব্যাখ্যা ও তার হুকুম।]
H.M Arif hossain

কী করলে রিজিক বাড়ে?


সবাই চায় তার রিজিক বেড়ে যাক, জীবনে প্রাচুর্য আসুক। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির ১০টি আমল বর্ণনা করা হয়েছে। সেগুলো হলঃ

১. তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা

খোদাভীতি ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা স্থাপন রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)

২. পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা

আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করলে ইহকালেই সুফল পাওয়া যায়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৫; মুসলিম, হাদিস : ৪৬৩৯)

৩. তওবা ও ইস্তিগফার করা

মুমিনের জীবনে তওবা ও ইস্তিগফারের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া রিজিক বৃদ্ধির কারণ। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭৬৭৭)

৪. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা

দানে ধন বাড়ে—এটা সর্বজনবিদিত। এ বিষয়ে কোরআনের বক্তব্য এমন—বলে দাও, ‘নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৯)

৫. বারবার হজ-ওমরাহ করা

একের পর এক হজ-ওমরাহ পালনে রিজিক বাড়ে। ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা একের পর এক হজ ও ওমরাহ করতে থাকো, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেভাবে কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১৫)

৬. অসহায়ের প্রতি সদয় আচরণ

বিপদ-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সামাজিক ইবাদত। মোসআব বিন সাদ (রা.) যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের কারণে অন্যের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। এমন প্রেক্ষাপটে মহানবী (সা.) তাকে বলেন, তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৬)

৭. ইবাদতের জন্য নিজেকে ফারেগ করে নেওয়া

আল্লাহর ইবাদতের জন্য নিজেকে ফারেগ করার মাধ্যমে অভাব দূর হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫৪)

৮. আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা

আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে জমিনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উদ্দেশে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর ওপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০০)

৯. বিয়ে করা

বিয়ের মাধ্যমে জীবনে বরকত ও প্রাচুর্য নেমে আসে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৩২)

১০. অভাব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা

আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ বান্দার হাত ফিরিয়ে দেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০)

ধন্যবাদ।

H.M.Arif hossain.

আপনি নিজের জীবন নষ্ট করছেন, এমন লক্ষণগুলি কী? insaf trust.com


একটা নষ্ট জীবনের দৈনন্দিন নিত্যকর্ম। যদি এইগুলোর সাথে আপনার অর্ধেক ও মিলে যায়, এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার,

  1. আপনি পর্ন দেখেন।
  2. আপনি, আপনার মোবাইল চার্জে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন।
  3. আপনি ঘুম থেকে দেরিতে ওঠেন৷
  4. ক্ষুধা ছাড়াই আপনি আহার করেন।
  5. আপনি বিছানাতে জান, সেই মোবাইল সাথে নিয়ে।
  6. পরবর্তীতে কি করবেন, এটা ভাবার চেষ্টা করেন কিন্তু কিছু মাথায় আসে না।
  7. আপনি মোটিভেশানাল ভিডিও দেখেন।
  8. জীবনে অর্থপূর্ন কিছু করার জন্য মোটিভেশন পান।
  9. ইউটিউব এ সুপারিশকৃত Masala ভিডিও ক্লিক না করে পারেন না।
  10. Facebook/ Instagram / WhatsApp, এইগুলোর যেটাতে নোটিফিকেশন টুস্কি মারে সেটাতে চলে যান৷
  11. আপনি নিরর্থকভাবে Scroll করেন, কারন আপনি করতে পারেন এমন ভাল কিছু নাই।
  12. আপনি আবার পর্ন দেখেন।
  13. সেই মোবাইল চার্জার খোজেন।
  14. আপনি যখন মোবাইল চার্জ দেন, চিন্তা করেন আমার কত সময় নষ্ট করছি।
  15. দশভাগের একভাগ সময় বন্ধুদের দেখেন, কিন্তু ঘুরা ফিরার জন্য প্রকৃত বন্ধু নাই।
  16. আপনি আবার শুয়ে থাকেন এবং চিন্তা করেন কেমন করিয়া আপনার জীবন নষ্ট করতেছেন৷
  17. আপনি ঘুমান৷
  18. আপনি জেগে ওঠেন এবং আহার করেন।
  19. আপনার মোবাইল আবার চার্জে দেন, আবার Scroll করা শুরু করেন।
  20. হঠাৎ করে একটি স্কুলের বন্ধুর ছবি সামনে আসে, তার প্রোফাইলে ঢোকেন, দেখেন সে কত সফল হয়েছে এবং তুলনা করেন।
  21. নিজের এবং পিতামাতার জন্য খারাপ অনুভব করেন।
  22. আবার Instagram এর নোটিফিকেশন টুস্কি মারে।
  23. আপনি আবার ইউটিউবে সুপারিশকৃত Masala ভিডিও দেখেন।
  24. রাতের সান্ধ্যভোজন করেন।
  25. আবার পর্ন দেখেন।
  26. মোবাইল চার্জে রেখে ঘুমিয়ে জান।
  27. জেগে ওঠেন।

এইগুলো পুনরায় করতে থাকেন।

প্রত্যেকেই এইগুলোর ভিতর থাকে। কখন এবং কীভাবে তারা বের হয়ে আসে এটা বিষয়।

H.M.Arif hossain

কিভাবে সুস্থ থাকতে পারি? Arif


ধন্যবাদ প্রশ্নটির জন্য।

আমি জানি আমার কোরার বন্ধুরা যথেষ্ট জ্ঞানী।তাও আমি এই উত্তরটি লিখছি কারণ এটি আমার খুব ভালো লাগার বিষয়বস্তু আর আমার এই নাতিদীর্ঘ জীবনে অনেক রকম অসুখের মুখোমুখি হয়েছি, মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিরে এসেছি তাই উত্তরটি লেখার তাগিদ ভেতর থেকে অনুভব করছি।

***সুস্থ থাকার উপায় সমূহ :

১) সারাদিনে অন্তত আট থেকে দশ গ্লাস জল পান করুন।

২) প্রচুর সবুজ শাক সবজি খান।

৩) ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত খাবার খুব কম খান।

৪) সকাল বা সন্ধ্যায় ৪০ মিনিট সপ্তাহে ৫ দিন হাঁটুন। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠুন ও নীচে নামুন।

৫) পছন্দের গান শুনুন।

৬) দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আপনার যা ভালো লাগে তাই করুন(যেমন আঁকা,নাচ,গান, রান্না,ঘর সাজানো ইত্যাদি)।এরফলে আপনার মন আরো সতেজ হয়ে উঠবে।

৭) আপনার পরিবারের সাথে সময় কাটান। একসাথে খান,গল্প করুন,দুশ্চিন্তা ভাগ করুন। খুব ভালো থাকবেন।

৮) প্রাণখুলে হাসুন ও অপরকে হাসান।

পুচকুটাকে দেখে হাসতে ইচ্ছে করছে না?

আসলে আমরা সামান্য সচেতন হলেই কিন্তু জীবনটাকে আরো অনেক বেশি উপভোগ করতে পারবো। দরকার শুধু সামান্য চেষ্টার।:)

ভালো থাকুন সবাই,সবসময়। ধন্যবাদ সবাইকে উত্তরটি পড়ার জন্য।

H.M. Arif Hossain.

এমন কিছু উপদেশ দেবেন কি, যা আমাদের প্রতিনিয়ত মনে রাখা উচিত?


  1. নিজের বুদ্ধিতে ফকির হবার চেষ্টা করুন। ফকির হলেও নতুন কিছু শিখতে পারবেন।
  2. সব সময় নিজের মূল্য বুঝতে শিখুন। আত্মসম্মান বোধ অনেক বড় ব্যাপার ।
  3. কেউ যেতে চাইলে যেতে দিন। ধরে রাখতে চাওয়াটা খুবই বোকামি।
  4. প্রচুর পড়াশোনা করুন। মাস্টার্স পাস করলেই পড়াশোনা শেষ এমনটা ভাবা ঠিক না।
  5. অন্যের সঙ্গে আলোচনা করুন কিন্তু সিদ্ধান্ত আপনিই নেবেন।
  6. লোকে আপনাকে নিয়ে কি ভাবলো কিংবা কি বললো এসবে একদম কান দেবেন না।
  7. প্রচুর পানি পান করুন। পানি পান করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এটা আপনি ভাবতেও পারবেন না।
  8. নিজেকে ভালোবাসুন। নিজেকে ভালো না বসতে পারলে আপনি অন্যকে ভালো বাসতে পারবেন না।
  9. মাঝে মধ্যে নিজের সঙ্গে কথা বলুন। এটা অনেক বেশি প্রয়োজনীয় বিষয়।
  10. জীবনে অপ্রয়োজনীয় লোকের সংখ্যা কমিয়ে দিন।
  11. ইন্টারনেট বিতর্ক থেকে দূরে থাকুন।
  12. কারো মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করবেন না। মনোযোগ চাওয়ার বিষয় না মনোযোগ অর্জন করার ব্যাপার।
  13. মানুষকে সাহায্য করুন। একসময় তিনগুণ ফেরত পাবেন।
  14. নিজের সুস্থতা - কে প্রাধান্য দিন।
  15. যে আপনাকে বুঝবে না তাকে ব্যাখা দিতে যাবেন না।
  16. সময় এবং টাকা এই দুটো কে অসম্মান করবেন না।
  17. মাঝে মধ্যে সব কিছু থেকে বিরতি নিন। আপনি রোবট নন।
  18. যেকোনো মাধ্যমে নেটওয়ার্ক তৈরি করুন।
  19. মানুষকে সম্মান দিন। আপনিও সম্মান পাবেন।
  20. কোনো কিছুতে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করতে নেই।
  21. সহজে কোনো কিছুতে মুগ্ধ হবেন না ।
  22. জীবন অনিশ্চিত এটা সব সময় মনে রাখুন।
  23. বন্দুকের গুলি আর মুখের কথা এক বার বের হলে আর ফেরানো সম্ভব না। তাই কাউকে এমন কোনো কথা বলবেন না যেনো কষ্ট পায়।
  24. নেগেটিভ মেন্টালিটির মানুষজনকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
  25. কারো উত্তর পড়লে উত্তরে আপভোট দিন কিংবা মন্তব্য করে উৎসাহ দিন ।

( ধন্যবাদ পড়ার জন্যে)

H.M Arif hossain 

Wednesday, August 5, 2020

নিজেকে কতটা সুখী মনে করেন? আপনার সুখের রহস্য কী?


আমি বেকার। না আছে চাকরি, না আছে পড়াশোনা। খাই আর ঘুমোই। তবু আমি সুখি কারণ-

  • আমার মাথার ওপরে ছাদ আছে। রেল স্টেশনে, ওভারব্রিজের নিচে ঘুমোতে হয়নি এই জন্মে, তাই আমি সুখি।
  • এই বেলা খেতে পেলে ওবেলা কী খাব তার চিন্তা করতে হয় না তাই আমি সুখি।
  • হাঁটতে পারছি, কথা বলতে পারছি, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারছি তাই আমি সুখি।
  • আমি শিক্ষার আলো দেখেছি তাই আমি সুখি।
  • আমি নিজে যা চেয়েছি তাই করেছি। আমার মা বাবা আমায় সবসময় আশীর্বাদ করেছেন, আমার ইচ্ছের মর্যাদা দিয়েছেন তাই আমি সুখি।

সুখি হতে প্রাথমিকভাবে যা দরকার তা সবই আমার আছে। তাই আমি সুখি। কিন্তু এগুলো তো ঈশ্বরের দান, আমি নিজে থেকে ঠিক করতে পারিনা যে আমি কোন পরিবারে জন্ম নেবো। তবু আমার কাছে যখন সুখের রহস্য জানতে চাওয়া হয়েছে তাহলে কিছু লিখতেই হয়। কথাগুলো আমার অন্যান্য উত্তরের কিছু কথার পুনরাবৃত্তি হবে, তবু আমি লিখছি।

  • আমি একটা কাজ করার সময়ে তার আগে পরের দিকগুলো ভেবে কাজ করি- পাঁচ মিনিটের ভালো লাগার জন্য বা কাউকে খুশি করার জন্য এমন কিছু করবো না বা বলবো না যাতে সারা জীবন আফসোস করতে হয়। আরেকটা ব্যাপার হতে পারে। এই ধরুন কারো নিন্দে করতে ইচ্ছে হল খুব। কিন্তু তার আগে যখন ভেবে দেখবো যে সেই মানুষটি আমার প্রিয় মানুষ, বা তার নামে নিন্দে করার যোগ্যতা আমার নেই তখনই থেমে যাবো।
  • ভুল করলে ক্ষমা চেয়ে ফেলি- আমি যতই ভেবে কাজ করি, মানুষমাত্রেই ভুল হয়। আমারও ভুল হয়। কিন্তু নিজের ভুল বুঝলেও একজন মানুষ দুটো কাজ করতে পারে- নিজের ভুলটা ঢাকতে গিয়ে অন্যকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারে বা ক্ষমা চেয়ে নিতে পারে। আমি দ্বিতীয়টা করি। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেই। আমি আমার এক বন্ধুর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। এরকম হয়েছিল কয়েকদিন আগে, যে যার সাথে যত রুক্ষ ব্যবহার করেছি তার জন্য অনুশোচনা হচ্ছিল। তখন তাকে মেসেজ করে ক্ষমা চেয়ে নিলাম, অনেকদিন পর সেও আমাকে তার অনেক কথা বলে দিলো, দুজনেই হালকা হলাম।
  • অন্যের কথায় আমল দেই না- যতক্ষণ না আমার মা বা কাছের মানুষ আমার কাজে কিছু বলছেন ততক্ষণ কারো কথায় আমল দেই না। সবাই তো সবার কাজে খুশি হয় না, সবার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।
  • স্বার্থপর হয়ে নিজের ভালোটা বুঝি- কোন কোন ক্ষেত্রে স্বার্থত্যাগ করে হয় না। যদি দেখি এখানে কাউকে সাহায্য করলে সে তার মুল্য দেবে না তাহলে তার ভালো করতে যাই না।
  • নেতিবাচক কথা বলা ও নেতিবাচক কথা বলা মানুষের সাথে থাকা এড়িয়ে চলি- Emotional contagion[1]বলে একটা শব্দ আছে যার মানে হচ্ছে যে আপনার ইতিবাচক বা নেতিবাচক কাজ ও কথা আপনার চারপাশের মানুষকে প্রভাবিত করে। যে মানুষ আমাকে সবসময়ে মনে করিয়ে দেবে যে আমি ভালো নই তার সাথে কথাবার্তা কম বলি। আমি নিজেও চেষ্টা করি positive vibe নিয়ে চলতে। কেউ দুঃখ পেলে যদি নিগেটিভ চিন্তা করে তাকে পজিটিভ দিকে নিয়ে আসতে চেষ্টা করি।
  • যেটা ভালো লাগে সেটা করি- সবার তো হবি বা প্যাশন বলে কিছু থাকে। আমিও সেভাবে দিনের অন্তত আধ ঘন্টা সময় নেই যখন আমি সময়টা কাটাই বই পড়ে, লিখে, গান শুনে বা সেলাই করে।
  • বাস্তব জীবনে বন্ধু ও পরিবারকে প্রাধান্য দেই- সারাদিন মোবাইলে এতটাই মগ্ন যে বাড়িতে কবে ভালো করে বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছি মনেই পড়ে না? এরকম করি না। ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে বাস্তব জগতটা বেশি জরুরি। সবার সাথে কথা বলতে হয়, সমস্যা থাকলে মাকে বলি, কোন বন্ধুকে বলি। বিপদে পড়লে ফেসবুকের ১০০০ জন ফ্রেন্ড নয়, বরং পরিবার ও বন্ধুরাই এগিয়ে আসে।
  • অন্যের ব্যাপারে নাক গলাই না- কে কাকে কী বলল, কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কী লিখলো তাতে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই না। এর কথা ওকে বলে ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়ার অভ্যাসটাকে খুবই ঘৃণা করি। এইজন্য আমি অনেক উটকো ঝামেলা থেকে দূরে থেকে সুখি আছি।
  • রোজ পড়তে বসি- নিজের যে প্রধান কাজ, সেটা পড়াশোনা বা চাকরি যাই হোক, মন দিয়ে করলে মনে প্রশান্তি আসে।

আমি লিখতে পারতাম যা আমার চাকরি নেই, আমাকে কেউ পাত্তা দেয় না তাই আমি সুখি নই। কিন্তু লিখতে বসে মনে হচ্ছে আমি খুব সুখি। মানে অনেক কিছু না থাকলেও মনের দিক থেকে পরিষ্কার তাই সুখি। শেষ করার আগে ইউটিউবে দেখা শ্রী গৌর গোপাল দাসের কিছু কথা ভাগ করে নিতে চাই-

একদিন একজন মা একটা কাপড়ে নক্সা করছিলেন। তার ছেলেটি সেটা দেখে, এবং সে কাপড়ের পেছনদিকটা দেখে বলে যে এখানে তো শুধু সুতোর কাটাকুটি ছাড়া কিছু নেই! তখন মা বলেন, "তুমি যখন তোমার দিক থেকে দেখছ তখন সেটা কাটাকুটি লাগছে, কিন্তু আমি যখন আমার দিক থেকে দেখছি তখন সেখানে দেখা যাচ্ছে একটা সুন্দর প্যাটার্ন, একটা পরিকল্পনা"। ঠিক তেমন জীবনকে আমরা যখন দেখে মনে করি সেটা অগোছালো অবস্থায় , অনিশ্চয়তা ভরা, জীবনের দিক থেকে দেখলে সেখানে লুকিয়ে আছে একটা সুন্দর পরিকল্পনা। [2]

আমি লিখছি আর আপনি সেটা পড়ছেন, এটা কি কম সুখ? এই সুযোগ বা কতজন পায়?

ফুটনোটগুলো

H.M Arif hossain.

জ্ঞানী মানুষদের বৈশিষ্ট্য গুলি কী কী?


জ্ঞানী মানুষদের বৈশিষ্ট্য গুলি কী কী?
১. তারা মানুষের চেয়ে দেয়ালের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে।

২। তারা সবসময় কল্পনায় মগ্ন থাকে। কল্পনা ছাড়া তাদেরকে চিন্তা করা যায় না।

৩। তাদের মতের সাথে অসঙ্গতিপুর্ণ মানুষের সঙ্গ তারা পরিত্যাগ করে। কোন বিষয়ে বোকার মতো তারা তর্ক করে না।

৪। তারা সাধারণ নিয়ম মানতে খারাপ অনুভব করে।

৫। তারা তাদের কাজে সংগ্রাম করে। এটা করে তারা সুখ পায়।

৬। তারা নিজেদের আত্মসম্মান বজায় রেখে চলে।

৭। তারা খুশি ও অন্তরে শান্তি অনুভব করে যখন তারা নীরবে থাকে।

৮। সকল কিছুর মাঝে ভালোবাসা তাদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে।

৯। কৌতূহলপুর্ণ মানুষের সঙ্গ তারা পছন্দ করে।

১০। তারা কথা বলার চেয়ে কথা শুনেন বেশি। তাড়াহুড়া করে কোন উত্তর দেন না। অনেক ভাবার পর তারা কোন বিষয়ে মন্তব্য করে।

১১। তারা নিরহংকারী হয়। অন্যের ভালো দেখে তারা খারাপ অনুভব করে না।

১২। অন্যদের ভুল দেখার চেয়ে নিজেরদের ভুলগুলো ঠিক করার প্রতি বেশি মনোযোগী হয়।

১৩। আত্ম সফলতার চেয়ে সামগ্রিক বা দলগত সফলতা তাদের কাছে বেশি মূল্যবান।

ধন্যবাদ লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপভোট করে যাবেন। কত নং বাক্যটি আপনার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা মন্তব্য করুন। আপনার কোন পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন মন্তব্য করে। পাঠকই আমার লেখার প্রেরণা।

H.M Arif Hossain.