Friday, July 31, 2020

কারা আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা?



কারা আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা?

মানুষ সমগ্র সৃষ্টিজগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। জ্ঞান-গুণ, বিবেক-বোধ, বুদ্ধিমত্তা-তৎপরতা, কার্যদক্ষতা ও জীবনব্যবস্থা থেকে শুরু করে আনুসাঙ্গিক প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ অপরাপর অন্যান্য সৃষ্টি থেকে ব্যতিক্রম ও প্রাগ্রসর। জীবন ও জগতের সব কিছুতে মানুষের স্বকীয়তা-অনন্যতা ও বৈশিষ্ট্য দেদীপ্যমান। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সমুজ্জ্বল ও প্রকৃষ্ট বহুবিধ গুণাবলি দ্বারা ঋদ্ধ করেছেন, যা মানুষকে সৃষ্টিকুল থেকে সামগ্রিকভাবে আলাদা করে তুলেছে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আমি আদম সন্তানদের মর্যাদাশীল করেছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল-৭০)

পবিত্র আল-কোরআনের সুরা বাকারাতেও আল্লাহ তাআলা মানুষের মান-মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ফিরেশতাদের অনুযোগের কথা উল্লেখ করেছেন। তাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে মর্যাদা দানের কারণ ও যথার্থতা বিধৃত হয়েছে সুন্দরভাবে।

মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ হলেন ঈমানদাররা। তবে ঈমানদারদের স্তরেরও তারতম্য রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন যারা মানবজগতের মধ্যে বিশেষ মর্যাদাবান। তাঁরা কাজকর্ম, ইবাদত-বন্দেগি ও সার্বিক কার্যকলাপর দ্বারা সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্যপরশ কামনায় মগ্ন থাকেন এবং প্রতিনিয়ত নিজেদের প্রভুর সকাশে আত্মসমর্পিত রাখেন। ফলে তাঁরা আল্লাহর সমধিক ভালোবাসা ও করুণা লাভে ধন্য হন।

তাঁদের অনেক গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যদ্দরুন আল্লাহ তাআলা তাঁদের অত্যধিক ভালোবাসেন এবং তাঁদের প্রতি করুণা ও দয়া-অনুকম্পার হাত প্রসারিত করেন। সুরা ফুরকানে আল্লাহ তাআলা তাঁদের বিভিন্ন গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা সুরা ফুরকানের ৬৩ নাম্বার আয়াত থেকে ৬৯ নাম্বার আয়াত পর্যন্ত আলোচিত তাঁদের বিভিন্ন চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলিগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্তরূপে আলোকপাতের প্রয়াস পাবো।

আল্লাহ তাআলার দাসত্ব : মানুষ যেহেতু আল্লাহর ‘আব্দ’ বা দাস, সে হিসেবে দাসের কাজ হচ্ছে সদা প্রভুর আদেশ-নিষেধের অনুগত থাকা। প্রভুর সামনে দাসের আশা-আকাঙক্ষা কিংবা ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলতে কিছু থাকে না। তার সব কিছু আল্লাহর মর্জির ওপর নির্ভরশীল। যে আল্লাহর প্রকৃতপক্ষে বান্দা হওয়ার যোগ্য, সে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, অভিরুচি সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাধীন সম্পাদন করে থাকে এবং সর্বদা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অবনত মস্তকে পালন করে। এ জন্যেই ইসলাম শব্দের অর্থ হচ্ছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ। (Compllete surrender into the almighty allah) অর্থাৎ আল্লাহর সকল হুকুম-আহকাম বিনা দ্বিধা-সংকোচে এবং যুক্তিতর্ক ও প্রশ্নের অবতারণা ব্যতিরেকে নিরঙ্কুশভাবে মেনে নেওয়া। এ জন্যে একজন খাঁটি মুমিনের প্রথম পরিচয় হবে আল্লাহর হুকুম-আহকাম সর্বোতভাবে ও অকুণ্ঠচিত্তে মেনে চলা।

পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করা : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর বান্দা হলো তারা, যারা জমিনে বিনীতভাবে চলাফেরা করে।’ (সুরা ফুরকান-৬৩) অর্থাৎ তাঁদের চালচলনে বিনয়-স্থিরতা ও নিরহঙ্কার প্রকাশ পায়। আত্মগরিমা, শঠতা ও দাম্ভিকতা দেখা যায় না। তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী হয় এবং তারা দৃঢ় পদক্ষপে পথ চলে। আল্লাহভীতির কারণে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সদা নমনীয় থাকে এবং যত্রতত্র সেগুলোর ব্যবহার থেকে তারা বেঁচে থাকে। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা দুর্বল-ভীরু কিংবা অক্ষম নয়। বরং আল্লাহভীতি ও আখিরাতের চিন্তা তাঁদের সজ্জন, সহনশীল এবং নমনীয় ও স্বল্পভাষী করে রাখে।

মূর্খজনোচিত আচরণের বিপরীতে শান্তির বার্তা : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুর্খেরা যখন তাদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা করে তখন তারা বলে, তোমাদের ওপর সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক।’ (সুরা ফুরকান-৬৩)

এখানে সালামের অর্থ মুসলমানেরা পরস্পর দেখা-সাক্ষাতে অভিবাদন জানানের ধর্মীয় মাধ্যম সালাম নয়। বরং ওই অজ্ঞের শান্তি-সুখ ও নিরাপত্তা কামনা করা এবং বুঝিয়ে দেওয়া যে তোমার অজ্ঞতাপ্রসূত আচরণের জবাব আমি মূর্খতা দিয়ে দেব না। তোমার সঙ্গে ঝগড়াও করব না। বরং তোমার শান্তি-সমৃদ্ধি ও মঙ্গল হোক, সেটাই আমি কামনা করি। আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেছেন, ‘ভালো ও মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। মন্দকে ভালো আচরণ দ্বারা প্রতিহত করো। অতএব যার সঙ্গে তোমার শত্রুতা রয়েছে, সে হয়তো তোমার পরমপ্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠবে।’ (সুরা ফুসসিলাত- ২৫)

সিজদা ও নামাজরত অবস্থায় রাত্রিজাগরণ করা : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা তাদের রবের ইবাদতে সিজদা ও দণ্ডায়মান অবস্থায় রাত্রিজাগরণ করে।’ (সুরা ফুরকান-৬৪)

যাঁরা ইবাদতের নিমিত্ত নিদ্রা ও শয্যা ত্যাগ করে রাত্রিজাগরণ করে, তাঁরা নিশ্চয় আল্লাহর প্রিয় বান্দা। শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সকল রাতের নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল। এ নামাজ মুমিনের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করে। সারা দিনমান তারা ইলম অর্জন-বিতরণ, দাওয়াত-তাবলিগ ও আপন কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে এবং নৈশপ্রহরে আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভে ব্রতী হয়। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে পৃথক থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে আশা ও আশঙ্কায় ডেকে থাকে।’ (সুরা সিজদা-১৬)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন- ‘তারা রাতের বেলা খুব স্বল্প আরাম গহণ করে এবং শেষপ্রহরে ক্ষমা-মার্জনা কামনা করে।’ (সুরা জারিয়াত ১৭-১৮)

আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দারা রাতে বিছানা ত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হয়। প্রভুর করুণা ও পুণ্য লাভের আশায় তারা নামাজ-জিকির এবং ইস্তেগফারে ব্যাকুল হয় ও আত্মসমাহিত হয়।

আল্লাহর অপার মেহেরবানি যে যারা এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করবে তাঁদেরও তিনি ‘ইবাদতের নিমিত্ত রাত্রিজাগরণকারী’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবেন। হজরত উসমান (রা.) বলেন, ‘যে এশার নামাজ জামাতে পড়ে, সে অর্ধরাত্রি এবং যে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে বাকি অর্ধরাত্রি ইবাদত করার সওয়াব পায়।’ (আবু দাউদ)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি শোয়া ও বসাবস্থায় অথবা পার্শ্বদেশ পরিবর্তন করা অবস্থায় আল্লাহ তাআলার জিকির করে, সেও উপর্যুক্ত আয়াতের আওতায় পড়বে।

জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া করা : আল্লাহর প্রিয় বান্দারা বলে, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি দূরে সরিয়ে নাও। জাহান্নামের শাস্তি নিশ্চয় ধ্বংসের।’ (সুরা ফুরকান-৬৫)

অপচয় ও কার্পণ্য না করা : আল্লাহর বান্দাদের আরেকটি গুণ হলো, ‘তারা যখন খরচ করে তখন তারা অযথা ব্যয় করেনা, কৃপণতাও করেনা। বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। (সুরা ফুরকান-৬৭)

শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে খরচ করাকে অপব্যয় বলে। যদিও তা অতি সামান্য হোক। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা অপব্যয় করেনা এবং কার্পণ্যও করেনা। কোরআনের অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেন,‘নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাঈল-২৭)

বৈধ ও শরিয়তের অনুমোদিত ক্ষেত্রেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা অপচয়ের পর্যায়র্ভুক্ত। কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী অযথা ও অনর্থক ব্যয় হারাম ও গুনাহের কাজ। ব্যয়বাহুল্য, বিলাসিতা ও আয়েশিভাব পরিহার করে চললে নিজের জন্যই মঙ্গল।

শিরক থেকে বেঁচে থাকা : আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্যতম একটি গুণ হলো, ‘আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে ডাকে না।’ (সুরা ফুরকান-৬৮) ‘শিরক’ করা বা কোনো কিছুকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা সবচেয়ে মারাত্মক গুনাহ। আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ মাফ করলেও শিরকের গুনাহ মাফ করবেন না। হযরত লোকমান (আ.) তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিয়েছেন, ‘হে পুত্র! তুমি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না। নিশ্চয় শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ।’ (সুরা লোকমান-১৩)

অন্যায় হত্যাকাণ্ডে না জড়ানো : আল্লাহর প্রিয় বান্দারা কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করে না ও পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না’ (সুরা ফুরকান-৬৮)

ব্যভিচার লিপ্ত না হওয়া : আল্লাহর প্রিয় বান্দারা ব্যভিচার-জিনা, অশ্লীল কার্যকলাপ ইত্যাদিতে জড়ায় না। এমনকি ব্যভিচারের নিটকটবর্তীও হয় না। তা থেকে যোজন যোজন দূরত্ব বজিয়ে রাখে। গান-বাজনা, নৃত্য-ছায়াছবি, অশ্লীল দৃশ্য, বেপর্দা ও খোলামেলা চলাফেরা এবং অবাধ মেলামেশা, এসব পাপাচার ও গর্হিত কাজ মানুষকে ক্রমান্বয়ে ছোট-বড় ব্যভিচারে লিপ্ত করে। আল্লাহ প্রিয় মানুষেরা এসবের ধারেকাছেও যায় না।

প্রসঙ্গত যারা উপর্যুক্ত গুনাহগুলো করবে, তাদের ব্যাপারে আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যে উল্লেখিত গুনাহসমূহ করবে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিবসে তার শাস্তি দিগুণ করা হবে এবং তাকে জাহান্নামে চিরস্থায়ী করে দেওয়া হবে’ (সুরা ফুরকান-৬৮-৬৯)

আয়াতে ‘আছামা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তাফসির বিশারদগণ বলেন, আছামা জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম, যা ভীষণ মর্মন্তুদ শাস্তিতে ভরপুর হবে। যারা কুফর ও শিরকের সঙ্গে সঙ্গে হত্যা ও ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে। এ শাস্তি কাফের ও মুশরিকদের জন্যে প্রযোজ্য। কিন্তু কোনো কাফের-মুশরিক বা গুনাহগার যদি আল্লাহর কাছে তাওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাদের অপরাধ মার্জনা করে দেবেন এবং তাদের পুরস্কারে ভূষিত করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এমন অপরাধী যদি ঈমান আনে ও তাওবা করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করতে থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদের পাপরাশিকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দিবেন। এবং আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়াবান।’ (সুরা ফুরকান-৭০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে কোনো মন্দ কাজ করেছে অথবা নিজের প্রতি অবিচার করেছে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল দয়াবান হিসেবে পাবে।’ (সুরা নিসা-১১০)

অনৈতিক ও মিথ্যা কাজে যোগদান না করা : আল্লাহর প্রিয়া বান্দারা মিথ্যাকথন, মিথ্যা আলোচনা, মিথ্যাচর্চার আসর ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করেন না। অনৈতিক ক্রিয়ালাপ-পরনিন্দা ও মিথ্যাসাক্ষ্য প্রদান থেকেও বেঁচে থাকে। উপরন্তু এসব থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা মিথ্যা কিছুতে উপস্থিত হয় না।’ (সুরা ফুরকান-৭২)

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সাঃ) মিথ্যাসাক্ষ্য দেওয়াকে মহা কবিরা গুনাহ আখ্যা দিয়েছেন। তাছাড়া মিথ্যা কথা বলাও কবিরা গুনাহ।’

অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হলে ভদ্রভাবে পাশ কেটে যাওয়া : তাঁরা যদি দৈবচক্রে অনিচ্ছাসত্ত্বেও অনর্থক ও বাজে আসর কিংবা কাজের মুখোমুখি হয়, তাহলে কৌশলে ও ভদ্রভাবে তা এড়িয়ে যান। গাম্ভীর্য ও শালীনতা বজায় রেখে সেখান থেকে সরে যান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন অনর্থক কিছুর পাশ দিয়ে যায়, তখন ভদ্রভাবে চলে যায়।’ (সুরা ফুরকান-৭২)

আল্লাহর নিদর্শনাবলীর আলোচনা করা হলে বধিরের মতো আচরণ না করা : যখন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সামনে আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনাবীল আলোচনা করা হয়, তখন তারা অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না। অর্থাৎ না শোনার না বোঝার কিংবা না দেখার ভান করেনা। বরং শ্রবণশক্তি ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। মূর্খের মতো না বোঝা কিংবা বধিরের ন্যায় না শোনার ভান করেনা। আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি ও নিদর্শনাবলীর প্রতি মনোনিবেশ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং যাদের তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, তখন তারা অন্ধ ও বধির হয়ে ওঠে না। (সুরা ফুরকান-৭৩)

যারা সত্য বুঝেও অন্ধের অভিনয় করবে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে দুনিয়াতে অন্ধ (পথভ্রষ্ট) হবে সে আখেরাতেও অন্ধ হবে। এবং অত্যধিক পথহারা হবে। (সুরা বনি ইসরাইল-৭২)

স্ত্রী-সন্তানের মাঝে চোখের শীতলতা চেয়ে দোয়া করা : আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এভাবে দোয়া করে (অন্যান্য দোয়াও করে), ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানাদিও পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদের খোদাভীরুদের ইমাম বা নেতা করুন।’ (সুরা ফুরকান-৭৪)

চোখের শীতলতা অর্থ তাদের আল্লাহর আনুগত্যে মশগুল দেখা। একজন কামিল মুমিনের জন্য চরম কাক্সিক্ষত বস্তু ও পরম চাওয়া-পাওয়া। কারণ সন্তানেরা যদি সৎ ও নেককার হয়, তবে তার ফলাফল তো দুনিয়াতে-ই দেখা যায়। মৃত্যুর পর কবরে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পৌঁছতে থাকে। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা কেবল নিজের সৎকর্ম নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে না। বরং নিজের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের যাবতীয় সংশোধন এবং তাদের সৎ পথের দিশা দেয়া ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে যান প্রতিনিয়ত।

উপর্যুক্ত ১৩ গুণে যারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবেন, তাঁদের কি পুরস্কার দেওয়া হবে, সে ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের ধৈর্য্য ধারণের বিনিময়ে জান্নাতে কক্ষসমূহ দেওয়া হবে এবং সেখানে তাদের অভিবাদন ও সালাম জানানো হবে। সেখানে তারা চিরকাল বসবাস করতে থাকবে। অবস্থান ও আবাসস্থল হিসেবে তা কতই না চমৎকার! (সুরা ফুরকান ৭৫-৭৬)

আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব গুণাবলিতে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

H.M Arif Hossain.

Saturday, July 25, 2020

কোরবানী কোরবানী সঠিক ইতিহাস নিজে জানুন শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন।


কোরবানি : কোরবানি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই (হে নবী!) আমি আপনাকে (নিয়ামত পূর্ণ) কাওসার দান করেছি, অতএব, আপনি আপনার ‘রব’ এর সন্তুষ্টির জন্যে সালাত কায়েম করুন ও তাঁর নামে কোরবানি করুন’ (সূরা আল কাওসার-১০৮/১-২)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করবে না সে যেন ঈদগাহের নিকটে না আসে’ (আহমদ ও ইবনে মাজাহ)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিনে মানবসন্তানের কোনো নেক আমলই আল্লাহ তায়ালার নিকট তত প্রিয় নয়, যত প্রিয় কোরবানি করা। কোরবানির পশুর শিং, পশম ও খুর কিয়ামতের দিন (মানুষের নেক আমলনামায়) এনে দেয়া হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো’ (তিরমিজি)।
কোরবানির অর্থ : আমাদের সমাজে বাংলায় প্রচলিত কোরবানি শব্দের অর্থ হচ্ছে, নিকটবর্তী হওয়া বা সান্নিধ্য লাভ করা। আল কুরআনে সূরা আল মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে, ‘ইজ ক্কাররাবা-ক্কুরবা-নান’ অর্থাৎ যখন তার দু‘জনে কোরবানি পেশ করলো বা পশু জবাই করলো, বা জবাই করে ফেলে আসল। সূরা আল কাওসারে বলা হয়েছে, ‘ফাছল্লি লিরাববিকা ওয়ানহার’ অর্থাৎ অতএব, (হে নবী!) আপনার ‘রব’ এর স্মরণে সালাত আদায় করুন ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্যে কোরবানি করুন’। এখানে ‘নাহার’ বলতে কোরবানি বোঝানো হয়েছে। আসলে ‘নাহার’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, নহর, বিশেষ নিয়মে জবাই বা জবাই করা, জবাই করে হত্যা করা বা প্রিয় বস্তু জবাই করে হত্যা করা বা ত্যাগ করা।
কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : দুনিয়ায় মানব বসতির শুরুতেই কোরবানির প্রচলন শুরু হয়েছে। পৃথিবীর প্রথম মানুষ আমাদের আদি পিতা ও নবী হজরত আদম (আ.) এর প্রথম সন্তান কাবিল ছিল আল্লাহ তায়ালা ও পিতা-মাতার অবাধ্য বা কাফের। কাবিলের ছোট ভাই হজরত আদম (আ.) এর দ্বিতীয় ছেলে হাবিল ছিল আল্লাহভীরু ও মু’মেন। সে সময় আল্লাহ তায়ালার হুকুমে জোড়া জোড়া সন্তান হতো। একজন পুত্র ও একজন কন্যা সন্তান। আল্লাহ তায়ালার বিধান মতো প্রথম জোড়ার পুত্রের সাথে দ্বিতীয় জোড়ার কন্যার বিয়ে বৈধ ছিল। কাবিল আল্লাহ তায়ালার বিধান মানতে রাজি ছিল না। সে চেয়েছিল তার জোড়ার সুন্দরী বোনকেই বিয়ে করবে। শেষ পর্যন্ত তাদেও দু’জনকে কোরবানি পেশ করার নির্দেশ দেয়া হলো। আর বলা হলো যার কোরবানি কবুল করা হবে সে-ই প্রথম জোরার সুন্দরী বড় বোনকে বিয়ে করবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা হচ্ছে,‘(হে নবী!) আপনি এদের কাছে আদমের দুই সন্তানের গল্পটি যথাযথভাবে শুনিয়ে দিন; গল্পটি ছিলো, যখন তারা দু‘জনে আল্লাহর নামে কোরবানি পেশ করলো, তখন তাদের মধ্যে একজনের (হাবিলের) কাছ থেকে কোরবানি কবুল করা হলো, আর একজনের (কাবিলের) কোরবানি কিছুতেই কবুল করা হলো না, (যার কোরবানি কবুল করা হয়নি) সে বললো আমি অবশ্যই তোমাকে (যার কোরবানি কবুল করা হলো তাকে) হত্যা করবো, সে (যার কোরবানি কবুল করা হলো) বললো, আল্লাহ তায়ালা তো শুধু পরহেজগার লোকদের কাছ থেকেই কোরবানি কবুল করে থাকেন’(সূরা আল মায়েদা-৫-২৭)।
আল্লাহ তায়ালার আইন অমান্য করার কারণেই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটায় পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান আল্লাহর দ্বীনের শত্র“, দুনিয়ায় শয়তানের প্রথম শিকার কাফের ‘কাবিল’। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম আল্লাহর আইন, বিধান বা দ্বীন অমান্য করা আর মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটালো আল্লাহর দ্বীনের শত্র“ কাফের ‘কাবিল’। এটাই হচ্ছে নাস্তিক, কাফের ও শয়তানের কাজ, যা আল-কুরআনের সূরা আল মায়েদাসহ আরো কয়েকটি সূরায় উল্লেখ আছে। পৃথিবীতে কোরবানির ইতিহাস ও হত্যার ঘটনা এখান থেকেই শুরু হয়েছে।
আজকে মুসলিম সমাজে কোরবানির যে প্রচলন তা মূলত মুসলিম মিল্লাতের বা জাতির পিতা হজরত ইব্রাহীম (আ.) এর দেখানো পথ বা সুন্নাত। হজরত ইব্রাহীম (আ.) এর শতবর্ষ বয়সের পর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে যে সন্তান দান করেছিলেন, তিনি আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে তাঁর সে কলিজার টুকরা হজরত ইসমাইল (আ.) এর কোরবানির সূত্র ধরে আজও কোরবানি প্রচলিত আছে।
হজরত ইব্রাহীম (আ.) এর কোরবানির সূত্রপাত : মুসলিম মিল্লাতের বা জাতির পিতা হজরত ইব্রাহীম (আ.) নমরুদ ও তার সাঙ্গো-পাঙ্গের অত্যাচারে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তাঁর স্ত্রী হজরত সারাকে সাথে নিয়ে শাম দেশে হিজরত করলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানকার বাদশাহ ছিলো জালিম ও ভীষণ বদলোক। বাদশাহর লোকেরা হজরত ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর সুন্দরী স্ত্রী হজরত সারার আগমনের সংবাদ বাদশাহর দরবারে পৌঁছে দিলে বাদশাহ তাদেরকে ধরে নিয়ে আসতে বলে। বাদশাহর লোকেরা হজরত ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী সারাকে বাদশাহর দরবারে হাজির করে। বাদশাহ হজরত ইব্রাহীম (আ.) এর কাছে জানতে চায় তার সাথে স্ত্রী লোকটি কে? ইব্রাহীম (আ.) চিন্তা করলেন, স্ত্রী বললে হয়তো বা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে, তাই তিনি বলেন, সে আমার দ্বীনি বোন। বাদশাহ হজরত ইব্রাহীম (আ.) কে বন্দী করে, আর হজরত সারাকে বাদশাহর বদস্বভাব চরিতার্থ করার জন্যে রেখে দেয়। বাদশাহর কু-প্রস্তাবে হজরত সারা রাজি নাহলে বাদশাহ তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। অতঃপর হজরত সারা দু’রাকা’আত সালাত আদায় করার অনুমতি চাইলে বাদশাহ তাঁকে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করতে দেয়। হজরত সারা সালাত শেষে আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদ করেনÑ যেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেন। এরই মধ্যে বাদশাহ অত্যন্ত অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে আর বাদশাহর মৃত্যুর জন্য তার লোকেরা হজরত সারাকে দায়ী করবে ভেবে হজরত সারা বাদশাহর সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। একে একে তিন বার একই ঘটনা ঘটলে বাদশাহ হজরত সারার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। হজরত সারার সতীত্ব দেখে আর এক সতী নারী হজরত হাজেরাকে তাঁর দাসী হিসেবে দিয়ে তাঁদেরকে বিদায় করে দেয়।
হজরত সারা ও হজরত ইব্রাহীম (আ.) মুক্ত হয়ে সে দেশে বসবাস শুরু করেন। হজরত সারা তাঁর দাসী হজরত হাজেরাকে হজরত ইব্রাহীম (আ.) এর সাথে বিয়ে দেন। কারণ হজরত সারার বয়স তখন ৯০ বছর আর হজরত ইব্রাহীম (আ.) এর বয়স তখন ১০০ বছর। তাদের বিয়ের দীর্ঘ সময় পার হলেও তখনো হজরত সারা মা হতে পারেননি। তিনি ভাবলেন শেষ বয়সে যদি আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানি করে তাঁর স্বামী হজরত ইব্রাহীম (আ.) কে কোনো সন্তান দান করেন। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে এই হজরত হাজেরার গর্ভেই হজরত ইসমাইল (আ.)-এর জন্ম হয়।
হজরত ইসমাইল (আ.) এর জন্মের পর হজরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর স্ত্রী হজরত হাজেরা ও কলিজার টুকরা ছেলেকে আল্লাহতায়ালা নির্দেশে কাবা ঘরের নিকটবর্তী সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে নির্জন স্থানে সামান্য খেজুর ও এক মসক পানিসহ রেখে আসেন। হজরত ইব্রাহীম (আ.) যখন তাঁদের এ অবস্থায় রেখে স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন হজরত হাজেরা প্রশ্ন করছিলেন, আপনি আমাদের এ নির্জন স্থানে রেখে চলে যাচ্ছেন ? হজরত ইব্রাহীম (আ.) ক্ষীণকন্ঠে জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। আবারো হজরত হাজেরা প্রশ্ন করলেন এটা কি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ? হজরত ইব্রাহীম (আ.) আবারও জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। হজরত হাজেরা আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে তাঁর শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করলেন।
সে সময় কা’বা ঘরের তেমন কোনো চিহ্ন ছিলো না। কা’বা ঘরের ভিটিটি জমিন থেকে বেশ উঁচু ছিল। বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় চার পাশ ভেঙে গিয়েছিল। হজরত হাজেরা ও তাঁর সন্তানের খাদ্য ও পানীয় যখন শেষ হয়ে গেলো হাজেরা তখন খাদ্য ও পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। যখন নিরাশ হয়ে ফিরছিলেন তখন একটি আওয়াজ শুনতে পান। হাজেরা বলেন, কে আছো আমি তোমার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি সম্ভব হলে তুমি আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে একটু সাহায্য করো। হঠাৎ তিনি তাঁর শিশু পুত্র ইসমাইল (আ.) এর কাছে একজন লোক (ফেরেশতা) দেখতে পেলেন। সে (ফেরেশতা) তাঁর পায়ের গোড়ালি অথবা ডানা দ্বারা জমিনে আঘাত করলে অথবা হজরত ইসমাইল (আ.) এর কান্নাজনিত পায়ের গোড়ালির ঘর্ষণে নিচ থেকে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হতে লাগল। এ সেই ফোয়ারা বা কূপ যা বর্তমানে জমজম নামে বিশ্ব মুসলিমের কাছে পরিচিত। সুপেয় পানীয় হিসেবে পান করে পরিতৃপ্ত হন মুসলমানরা। তাও কা‘বাকে কেন্দ্র করে ও হজরত ইসমাইল (আ.) এর উছিলায় আল্লাহ তায়ালার করুণায় সৃষ্টি হয়েছে।
হাজেরা তাঁর মসক পূর্ণ করে নিলেন আর নিজেও তৃপ্তির সাথে পানি পান করলেন। এতে হজরত হাজেরার ক্ষুধা নিবারণ হল ও তাঁর শিশু পুত্রের জন্যে প্রয়োজনীয় দুধেরও ব্যবস্থা হলো। হজরত হাজেরার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ক্রমাগত ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার কারণে সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্যে সাফা মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার বিধান জারি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দুটো আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন সমূহের অন্যতম, অতএব, যদি তোমাদের মধ্যে কোনো লোক হজ বা ওমরা আদায় করার এরাদা করে তার জন্যে এই উভয় পাহাড়ের মাঝে তাওয়াফ করা বা দৌড়ানো দোষের কিছু নেই, কেননা যদি কোনো ব্যক্তি অন্তরে নিষ্ঠার সাথে কোনো ভালো কাজ করে তাহলে তারা যেন জেনে রাখে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা কৃতজ্ঞতাপরায়ণ ও প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী”(সূরা বাকারা-২-১৫৮)।
হজরত ইসমাইল (আ.) এর যখন হাঁটা-চলা ও খেলাধুলা করার বয়স তখন হজরত ইব্রাহীম (আ.) কে স্বপ্নে আদেশ করা হলো, তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করো। ইব্রাহীম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি আবারো একই স্বপ্ন দেখলেন। অতঃপর ইব্রাহীম (আ.) আবারো ১০০টি উট কোরবানি করলেন। আবারো তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছেতো এ মুহূর্তে আমার কলিজার টুকরা প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) ছাড়া আর তেমন কোনো প্রিয় বস্তু নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর আমি তাকে (হজরত ইব্রাহীম আ. কে) একজন ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দান করলাম। সে যখন পিতার সাথে হাঁটা-চলার উপযোগী হলো, তিনি (ইব্রাহীম আ.) বললেন, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে কোরবানি করছি। সুতরাং তোমার মতামত কি? সে (হজরত ইসমাইল আ.) বললেন, হে আমার পিতা! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। আপনি আমাকে আল্লাহর মেহেরবানিতে ধৈর্যশীলদের একজন পাবেন।
H.M.Arif Hossain.

Friday, July 24, 2020

হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিদায় হজ্জের ভাষণ Insaf trust.com


হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিদায় হজ্জের ভাষণশুক্রবার, ৯ জিলহজ, ১০ হিজরী সনে আরাফার দিন দুপুরের পর প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লক্ষাধিক সাহাবির সমাবেশে হজের সময় এই হৃদয় বিগলিত ভাষণ দেন। প্রথমে তিনি মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার প্রশংসা করেন। তারপর সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন-

১. আজ সকল প্রকার কুসংস্কার অন্ধ বিশ্বাস এবং সকল প্রকার অনাচার আমার পদতলে দলিত-মথিত হয়ে গেল।

২. তোমরা তোমাদের দাস-দাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার করো। তাদের সাথে তোমরা খারাপ ব্যবহার কোরো না। তাদের ওপর নির্যাতন করবে না। তোমরা যা খাবে তাদেরকে তোমরা তাই খেতে দিবে। তোমরা যে বস্ত্র পরিধান করবে তাদেরকে তাই পরিধান করতে দিবে। মনে রেখো তারাও মানুষ তোমরাও মানুষ। এরাও একই আল্লাহ্র সৃষ্টি।

৩. সাবধান! নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তাদের ওপর কখনো অন্যায়-অত্যাচার করবে না। কেননা তারা হলো অবলা। কেননা তাদের দায়িত্ব তোমাদের ওপরই। তোমাদের যেমন নারীদের ওপর অধিকার আছে। তেমনি তোমাদের ওপরও নারীদের অধিকার আছে। দয়া ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের সাথে আচরণ করবে।

৪. আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরিক করবে না। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরিক করে সে কুফুরি করল।

৫. সুদ ঘুষ রক্তপাত অন্যায় অবিচার জুলুম নির্যাতন কোরো না। কারণ এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। আর মুসলমান পরস্পর ভ্রাতৃসমাজ।

৬. তোমরা মিথ্যা বোলো না। কারণ মিথ্যা সব পাপ কাজের মূল। কারণ মিথ্যাই বিপদ ডেকে আনে।

৭. চুরি কোরো না। ব্যভিচার কোরো না। সর্বপ্রকার মলিনতা হতে দূরে থেকো। পবিত্রভাবে জীবনযাপন করো। সাবধান! শয়তান থেকে তোমরা দূরে থেকো। তোমরা কোনো একটি কাজকে খুব সামান্য মনে করবে, কিন্তু শয়তান এসবের মাধ্যমে তোমাদের সর্বনাশ করিয়ে ছাড়বে।

৮. তোমরা তোমাদের আমীরের আদেশ অমান্য করবে না। যদিও হাবশি নাক কাটা গোলাম হয়। তোমরা তার আনুগত্য করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহ্র দীনের ওপর থাকবে।

৯. ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না। কারণ তোমাদের পূর্ব-পুরুষেরা এই কারণে ধ্বংস হয়েছে।

১০. বংশের গৌরব কোরো না। যে ব্যক্তি নিজ বংশকে হেয় প্রতিপন্ন করে অপর বংশের পরিচয় দেয় তার ওপর আল্লাহ্র অভিশাপ।

১১. তোমরা তোমাদের প্রভুর এবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে। রোজা রাখবে, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে, তবেই তোমরা জান্নাতি হতে পারবে।

১২. আমি আমার পরে তোমাদের জন্য যা রেখে যাচ্ছি তা তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবে। তার ওপর আমল করবে। তাহলে তোমাদের পতন ঘটবে না। আর তা হচ্ছে আল্লাহ্র কুরআন ও নবীর সুন্নত।

১৩. তোমরা ভালোভাবে জেনে রাখো আমিই সর্বশেষ নবী আমার পরে আর কোনো নবী আসবেন না। আমিই আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। আমার এই সকল বাণী তোমরা যারা শুনেছ তারা যারা অনুপস্থিত তাদের নিকট পৌঁছে দিবে।

মহানবী সাঃ ভাষণ শেষ করলেন। এবং তাঁর চেহারা মোবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি করুণ স্বরে করুণভাবে আকাশ পানে তাকালেন এবং তিনি বললেন, ‘হে মহান প্রভু! হে পরওয়ার দিগার! আমি কি তোমার দীনের দাওয়াত পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। তখন উপস্থিত জনতা সবাই সম্মিলিতভাবে বললেন, নিশ্চয়ই আপনি আপনার দীন পরিপূর্ণভাবে পৌঁছাতে পেরেছেন। তখন তিনি আবার বললেন যে, ‘হে প্রভু! আপনি শুনুন, আপনি সাক্ষী থাকুন, এরা বলেছে আমি আপনার দীনকে লোকদের নিকট পৌঁছাতে পেরেছি। আমি আমার কর্তব্য পালন করতে পেরেছি।

ভাবের আতিশয্যে নবী নীরব হলেন। জান্নাতি নূরে তাঁর চেহারা আলোকদীপ্ত হয়ে উঠল। এই মুহূর্তে কুরআনের শেষ আয়াতটি নাজিল হয়। ‘আজকের এই দিনে তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম। ইসলামকেই তোমাদের ওপর দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’

হযরত রাসূল (সাঃ) কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। জনতা নীরব। কিছুক্ষণ পর হযরত (সাঃ) জনতার দিকে তাকালেন এবং করুণ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন বিদায় বন্ধুগণ, বিদায়।

H.M.Arif Hossain.

Wednesday, July 22, 2020

আয়তুল কুরসির ৪টি ফজিলত সবাই শিখুন insaf trust.com


আয়াতুল কুরসি কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত’। যা সমগ্র কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াতও বটে। এ সূরার রয়েছে অনেক ফজিলত।

হাদিসের ভাষায় আয়াতুল কুরসি পাঠের বিশেষ চার ফজিলত

১. হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকে না। (নাসাঈ)

২. হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় থাকে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি শোয়ার আগে পড়বে আল্লাহ তার ঘর, প্রতিবেশীর ঘর এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (বায়হাকি)

৩. হজরত উবাই বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে কুরআন মাজিদের কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু আল্ হাইয়্যুল কাইয়্যুম) তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত তার বুকে রেখে বলেন, আবুল মুনযির! এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ। (মুসলিম)

৪. আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সুরা বাকারার মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি পুরো কোরআনের নেতাস্বরূপ। তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। তা হলো ‘আয়াতুল কুরসি’। (মুসনাদে হাকিম)

আয়তুল কুরসী কুরসি হচ্ছে এই-

اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

বাংলা উচ্চারণ- আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম। (সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)

অর্থ : আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।

এই পুরো আয়াতটিই আল্লাহর একত্ববাদ ও মর্যাদার গুণগান বিধায় আল্লাহ এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আয়াতুল কুরসির আমল করার এবং কুরআন অনুযায়ী জীব্ন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

H.M Arif Hossain

Tuesday, July 21, 2020

আপনি কি আমার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক কিছু বলতে পারেন? Insaf trust.com


  • খুব শিগগির অসম্ভব চমৎকার একটা কিছু ঘটতে চলেছে আপনার জীবনে, আপনি কি সেটি অনুভব করতে পারছেন ?
  • জীবনটাকে নতুন করে আবিষ্কার করার জন্য কখনো কখনো সব ছেড়েছুড়ে হারিয়ে যেতে হয়!
  • মানুষ পরাজয়ের জন্য সৃষ্টি হয়নি। তাকে হয়তো ধ্বংস করা যায়, কিন্তু হারানো যায় না ।
  • যদি বুদ্ধি খরচ করতে না জানেন, তবে টাকার থলি থেকে খরচ হবে ।
  • পানির গভীরতা নাকের কাছে উঠে আসার আগেই সাঁতার শিখে নিন ।
  • অতীত নিয়ে সবসময়ে পড়ে থাকলে আপনার এক চোখ অন্ধ, অতীতকে ভুলে গেলে আপনার দুই চোখই অন্ধ ।
  • সৎ কর্ম যত ছোটই হোক, তা কখনও বৃথা যায় না ।
  • যারা নতুন কিছু খোঁজে না, একদিন তাদেরও কেউ খুঁজবে না ।
  • নিজেকে বদলান, ভাগ্য নিজেই বদলে যাবে ।
  • সুখী জীবনের জন্য খুব অল্প কিছুর প্রয়োজন। এটা আপনার মধ্যেই আছে, এটা আপনার ভাবনার ধরন । H.M Arif

Monday, July 20, 2020

সফল হওয়ার কিছু ন্যূনতম টিপস কি কি


১)বিল গেটস সর্ববৃহৎ প্রযুক্তিবিদ এবং সমাজসেবী হয়ে উঠতে সময় নিয়েছেন কয়েক দশকেরও বেশী ।

২) ইলন মস্ক সেরা প্রযুক্তিবিদ এবং রিয়েল ম্যান হয়ে উঠতে সময় নিয়েছেন কয়েক দশক ।

৩) জেফ বেজোস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হতে কয়েক দশক সময় নিয়েছেন।

৪) ওয়ারেন বাফেটকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয় জীবন্ত কীংবদন্তী,যার জন্যও তাকে ব্যয় করতে হয়েছে কয়েক দশক।

৫) মার্ক জুকারবার্গের সামাজিক যোগাযোগের জনক হতে সময় লেগেছে কয়েক দশক।

৬) জ্যাক মা বি 2 বি ই-কমার্স ব্যবসায়ের কিং হতে কয়েক দশক সময় নিয়েছেন।

৭) সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্ভাবক হয়ে উঠতে স্টিভ জবসেরও কয়েক দশক সময় লেগেছিল।

৮) টাটা গ্রুপের এক শতাব্দী লেগেছে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডে পরিনত হতে।

৯) মুকেশ আম্বানিও বিশ্বের একনম্বর ধনী পরিবার হয়ে উঠতে কয়েক দশক সময় নিয়েছেন।

পৃথিবীতে বড় কিছু হওয়ার জন্য আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় রয়েছে।ধীর-স্থিরভাবে কোন কাজ করলে সেটি মজবুত ও টেকসই হয়। উপরের লোকগুলো কিভাবে সবোর্চ্চ ধনী আর বিখ্যাত উদ্যোক্তা হলেন ভেবে আপনি বিস্মিত হতে পারেন কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে এটির মধ্যে কোন রহস্য নেই, রয়েছে শুধু সঠিক পরিকল্পনা,কঠোর পরিশ্রম আর ধৈয্যের।আপনার কাছে এই তিনটি জিনিষ থাকলে আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন। সুতরাং এখনই সময় কাজে নেমে পড়বার!

”প্রেরণাই লেখার চাবি”

” সফল করো হে প্রভু আজি সভা,

H.M Arif

Friday, July 10, 2020

কোন ভুলগুলো জীবনকে ধ্বংস করে দেয়?


১। টাকা বা চেহারা দেখে কোনও সম্পর্ক শুরু করা।

২। আপনার নতুন সঙ্গী আপনার পুরাতন বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটা পছন্দ করে না বলে তাদের ভুলে যাওয়া।

৩। ক্লাসের পড়া পড়তে পড়তে নিজের শখ বা পছন্দের বিষয়কে ভুলে বসা। এমনও হতে পারে ওই শখের বিষয়ই আপনার জীবনের লক্ষ্য বা প্যাশন যাকে বলে।

৪। নিজের সাথে মিথ্যে বলা। আপনার হয়তো স্বপ্ন আছে আপনি পাবলিক স্পিকার হবেন, কিন্তু সবার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভয়ে আপনি নিজেকে মিথ্যে বলছেন যে আপনাকে দিয়ে ওসব হবে না। এধরনের মিথ্যে আমরা কম বেশী সবাই বলে থাকি, তাই না?

৫। একবার প্রতারিত হওয়ার পর নিজের আবেগকে সরিয়ে রাখা যেন আপনাকে আর কখনোই প্রতারিত হতে না হয়।

৬। গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করার পর আমি আমার লাইফ গড়া শুরু করব - এমন চিন্তাভাবনা করা। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে করতে জীবনের তিনভাগের একভাগ পেরিয়ে যায়।

৭। নতুন একটি মোবাইল কিনলেও যত্ন করে মোবাইলের সাথে দেয়া ম্যানুয়াল পড়ে ফেলা অথচ নিজের ম্যানুয়ালকে দুপায়ে মাড়িয়ে যাওয়া। নিজের ম্যানুয়াল বলতে - নিজের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে জানার জন্য সাইকোলজি ও বিজ্ঞান চর্চা, সর্বপরি নিজেকে জানা।

৮। কাজে দিচ্ছে না জানার পরও একই রুটিন নিয়ে পড়ে থাকা।

৯। সময় খুব মূল্যবান, কারো জন্য থেমে থাকবে না - এই সাধারণ বিষয়টি না বোঝা। এককথায় - দীর্ঘসূত্রিতা।

১০। একজন ঠিক তখনই ব্যর্থ হয় যখন সে হাল ছেড়ে দেয়। সহজেই হাল ছেড়ে দেয়া জীবনকে বরবাদ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ।

১১। ফলোয়িং দ্য ক্রাউড! সবাই যেদিকে দৌড়াচ্ছে অন্ধভাবে সেদিকে দৌড়ানো।

১২। এখানে একটু, ওখানে একটু ঘুরে ফিরে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরালাম, কিন্তু অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টাকা আয় না করা। জীবনে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি টাকারও দরকার আছে।

১৩। নিজের সুখের কারণ না খুঁজে, অন্যদের সুখের উৎসকে নিজের মনে করা। আমরা প্রত্যেকে আলাদা, আমাদের সুখের উৎসও ভিন্ন।

১৪। যাকে ভালোবাসেন, তাকে ঠকানো বা প্রতারণা করা।

১৫। স্টিভ জবস জন্মানোর সময় তাঁর দক্ষতা সাথে করে আনেন নি, জন্মানোর পর এই মাটির দুনিয়ায় দক্ষতা অর্জন করেছেন। দক্ষতা বা স্কিল কেউ জন্মসূত্রে পায় না, অর্জন করতে হয়।

১৬। ওহ! বরাবরের মতো নিজেকে অযোগ্য ভাবা। আমাকে দিয়ে হবে না, আমি ঠিক করে কথাই বলতে পারি না...

১৭। সকালে চারা লাগিয়ে বিকেলে ফল প্রত্যাশা করা। কেউ রাতরাতি সফল হয় না, সফল হতে সময় লাগে।

১৮। আর তারপর, আরও একবার হাল ছেড়ে দেয়া।

চিত্রসূত্র : গুগল 

H.M Arif

Tuesday, July 7, 2020

১৮ বছর বয়সে আপনি কোন পরামর্শ দিবেন?


১৮ বছরের একটি ছেলে অথবা মেয়েকে আমি নিচের পরামর্শগুলো দিবো । আমি মাঝে মাঝে ভাবি ওই বয়সটাতে যদি এমন কেউ থাকতো যে এই কথাগুলো বলে দিতো, তাহলে আমি আজকের চেয়ে আরো উন্নত জীবন পেতাম ।

১) আবেগের জলে নিজেকে জলাঞ্জলি দিয়ো না। নিজের জন্য বাঁচো, পরিবার অথবা অন্য কারো জন্য নয়।

তুমি যেটা সত্যিকার অর্থে হতে চাও সেটার জন্যই শ্রম দাও । নিজেকে প্রশ্ন করো- "আজ থেকে ১০ বছর পর আমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাই ?"

২) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তোমার যেটা আছে সেটার জন্য !

ধরে নাও- এখন তোমার যেটা নেই সেটার যোগ্য তুমি নও (অথবা সেটা তোমার পাওয়ার কথা না), আর যেটা আছে সেটাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করো ।

৩) তুমি আজ পরীক্ষায় কি ফলাফল করলে তাতে কিছুই যায় আসে না । বাস্তব জীবন নিচের ছবির মতো ।

এমনকি কোন প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করছো সেটাতেও কিছু যায় আসে না । গুরুত্বপূর্ণ হলো- "আজ থেকে ঠিক এক যুগ পরে তোমার অবস্থান কোথায় হবে ।"

মনে রাখবে পরীক্ষার খাতা আর জীবনের খাতা দুটোই আলাদা । জীবনের খাতায় সাফল্য অর্জন করার জন্য একটু ভিন্নভাবে তোমাকে চিন্তা করতে হবে । একসময় দেখবে তোমার ক্লাসের সেরা ছাত্রটা রাস্তার মোড়ে মুদির দোকানে তেল বিক্রি করছে, আর যাকে তুমি পাত্তাই দিতে না সেই ছেলে অথবা মেয়েটার কাছে শত শত লোক চাকরিরি জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে । এটি আমি একটি উপমা দিয়ে বোঝালাম মাত্র ।

তাই সমাজকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিছু করো না, বরং নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে দুনির্বার গতিতে এগিয়ে যাও ।

৪) অধ্যায়ন করার পাশাপাশি জীবিকার জন্য কিছু করো ।

এটা তোমাকে বাস্তবতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে এবং ভবিষ্যতে তোমার পথ চলা অনেক সহজ করে দিবে । বিশ্বাস করো, এই সামান্য অভিজ্ঞতা তোমাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে যখন তুমি ছাত্রজীবনের পথ চুকিয়ে কর্ম জীবনে প্রবেশ করবে ।

৫) এখন থেকেই দান করার অভ্যাস করো ।

ছোট ছোট করে করো । রাস্তার পাশে অসহায় ভিখারিকে দেখে নাক না সিটকিয়ে বরং তোমার টিফিনের পয়সা থেকে একটি ওকে দাও ।

তোমার বাবা-মা এই দান করার মানসিকতা পছন্দ করবে না, আমি জানি । তারা বলবে “ছাত্রজীবনে এগুলির প্রয়োজন নেই ।’’

কিন্তু মনে রাখবে ভালো কাজের অভ্যাস ছাত্রজীবন থেকেই করতে হয় ।

৬) প্রতিযোগিতা করার মনোভাব কমাও, বরং সহযোগিতা করো ।

প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে তুমি অন্ধের মতো দৌড়াবে- হয়তো সামনে এগিয়েও যাবে, কিন্তু একসময় হাপিয়ে যাবে। তাই তোমার ক্লাসের কোনো পিছিয়ে থাকা বন্ধুকে তোমার নোট খাতা দিয়ে সহায়তা করো । দেখবে তখন তুমি প্রতিযোগিতা ছাড়াই অনেক কিছু শিখতে পারবে, এবং সকলের ভালোবাসায় সিক্ত হবে !

৭) "গাছের মতো হও, মরা পাতাদের ঝরে যেতে দাও"- (রুমি) ।

আমি জানি তোমার অভিমান আছে, রাগ আছে, ব্যর্থতা আছে । এমনও হতে পারে তোমার আরেক ভাই অথবা বোন পরিবারের কাছ থেকে বেশি সুযোগ পাচ্ছে, আর তোমাকে নিয়ে তেমন কেউ কিছু ভাবছে না । আসলে এরকম সবার ক্ষেত্রেই হয় । কিন্তু তোমার শোক এবং ব্যর্থতাকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে ।

৮) ভালো শ্রোতা হও ।

আগে শুনো, কিন্তু পাশাপাশি প্রশ্ন করতেও শিখ । এমন কিছু প্রশ্ন করো যে প্রশ্ন আগে কেউ করে নি । এটা তোমার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবে এবং কৌতুহলী করে তুলবে । পৃথিবীর সকল সৃজনশীল মানুষেরাই কৌতুহলী।

৯) ভালোবাসো !

কিন্তু অন্ধ ভালোবাসা থেকে বিরত থাকো । যৌক্তিক হও ।

১০) স্মৃতি সঞ্চয় করো ।

সব সম্পদই ক্ষণস্থায়ী এবং নশ্বর । কিন্তু স্মৃতি অনেকদিন বেঁচে থাকে; সুদীর্ঘকাল বেঁচে থাকে ।

১৮ বছরের গল্পগুলো জীবনের শ্রেষ্ঠ্য সাহিত্য । তাই গল্প জমাও, জীবনের গভীরতম সুখকে উপলব্ধি করো, কিছু শিহরণ অথবা প্রথম প্রেমের কবিতা লেখো- এরপর ভালো না লাগলে ছুড়ে ফেলে দাও । ঠিক ঐযে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো -

তোমাকে দিলাম, নবীন কিশোর, ইচ্ছে হয় তো অঙ্গে জড়াও

অথবা ঘৃণায় দূরে ফেলে দাও, যা খুশি তোমার

তোমাকে আমার তোমার বয়সী সব কিছু দিতে বড় সাধ হয়।

১১) শুধুমাত্র কাগজের পুস্তকে মুখ বুজে থেকো না ।

প্রকৃতি এবং জগৎকে অধ্যায়ন করো । ভ্রমণ করো ।

১২) পরিমিত পরিমান ঘুমাও ।

আমি নিশ্চিত জানি তোমার শিক্ষকরা বলবে ঘুম বন্ধ করে পড়া মুখস্ত করতে । তোমার মতো বয়সে সবাই ভাবে, না ঘুমিয়ে না খেয়ে সারাদিন রাত অধ্যায়ন করলেই বুঝি সকলের সেরা হওয়া যাবে ।

আসলে দোষটা তোমার নয়, কারণ তোমার মতো সময়ে কেউ আসলে বুঝে উঠতে পারে না "সকলের সেরা" হওয়া বলতে আসলে কি বোঝানো হয়? আদৌ কি সকলের সেরা হওয়ার দরকার আছে ।

তাই নিজের স্বস্থ্যের প্রতি যত্ন নাও, পর্যাপ্ত ঘুম তোমাকে মানুষিক প্রশান্তি দিবে এবং সৃজনশীলতাকে বৃদ্ধি করবে ।

১৩ ) তুমি যদি নারী হও তাহলে সুযোগ এবং অধিকারের আশায় বসে থেকো না । কারণ সুযোগ কারো জন্যই এমনিতে এসে ধরা দিবে না । নিজের যোগ্যতা দিয়ে অন্য সবার চেয়ে পৃথক করো ।

রূপ চর্চার পেছনে সময় কম ব্যয় করো, হাতের কাছ থেকে মেক-আপ বক্সটি দূরে রাখো, বই পড়ো, চিন্তা করো, রুচিশীল এবং সুশীল ব্যক্তিত্ব গঠন করো । কারণ তুমিও চাও না যে তোমার ভবিষ্যৎ পাশের বাসার খালাম্মার মতোই হোক, তোমার স্বপ্ন হবে মহিয়সী নারীদের মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করার !


H.M Arif