মেধাবী - হতে বোধহয় সবাই চায়, কিন্তু মেধা সম্পর্কে আমাদের বহু ভুলভাল ধারণা আছে। আমরা মনে করি বেশি নম্বর মেধা নির্ধারণ করে। এটা কিন্তু ভুল। আমি ট্রেনিং- এ যে সব বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছি, সেইগুলো তুলে ধরছি :
উন্নত মেধা সম্পন্ন শিশুদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা ওয়ালটন ( Walton - 1961) :
- এরা সহজে তাড়াতাড়ি শিখতে পারে।
- বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান ও ব্যবহারিক জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারে।
- অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হয়।
- যথাস্থানে ও সঠিক শব্দ চয়ন করতে পারে।
- একাধিক বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক ও তাৎপর্য নির্ণয় করতে পারে।
- কোন বিষয়ে সহজেই প্রতিক্রিয়া করতে পারে।
- একবার শুনে ও দেখে কোন বিষয় সঠিকভাবে মনে রাখতে পারে এবং প্রয়োজনে সেই বিষয়ে বলতেও পারে।
Renzulli ও Reis ( 1991) আরও কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন :
- মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা নিজেকে কাজে ব্যাপৃত রাখে ও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
- এরা সৃজনশীল, এদের চিন্তাধারা ব্যতিক্রমী হয় ও বিভিন্ন বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী হয়।
এদের বিশেষ চাহিদা আছে, যেটা অধিকাংশ অভিভাবক জানেন না :
- এরা চায় এদের কাজগুলির প্রশংসা করা হোক ও অনুমোদন করা হোক। এই সব শিক্ষার্থীর যথাযথ জীবন বিকাশের জন্য সাধারণের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিতে হয় ও তাদের সাফল্যের মর্যাদা দান করতে হয়।
- এরা সাধারণ শিশু অপেক্ষা অনেক বেশি কৌতুহলপ্রবণ হয় এবং জ্ঞানের চাহিদা খুব বেশী থাকে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের এদের কৌতূহল ও জ্ঞানের চাহিদা পূরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং উৎসাহ দেবেন।
- এরা অভিভাবক বিশেষত বাবা-মার কাছে বেশি যেতে চায়। এটা কিছুটা নিরাপত্তা চাহিদা থেকে আসে।
- এদের মধ্যে সব সময় কোন না কোন কাজে ব্যাপৃত থাকার প্রবণতা থাকে। এরা যাতে এদের চাহিদা ও পছন্দ মত কাজ করার সুযোগ পায় তার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
- এইসব শিক্ষার্থীরা সর্বদা যুক্তি দিয়ে ভাবতে চায়। যুক্তিবিজ্ঞানের কথা তারা সহজে মানতে চায়। তাই এদের কাছে সবসময় যুক্তিপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে হয়।
এদের শিক্ষা দেওয়ার বিশেষ ধরণ আছে :
- উন্নত মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা যেহেতু মানসিক ক্ষমতার দিক থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে ব্যতিক্রম হয়, তাই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ ধরনের হওয়া উচিত।
- এইসব ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রমের মধ্যে কিছু বিশেষ উন্নত বিষয়সমূহ থাকবে, যা তাদের জ্ঞানের চাহিদাকে পরিতৃপ্ত করে। সাধারণ মানের পাঠক্রম যদি তাদের অনুসরণে বাধ্য করা হয় সেক্ষেত্রে তাদের মানসিক ক্ষমতার পুষ্টি হবে না এবং ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন হবে না। তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত কঠিন সমস্যা দেওয়া থাকবে, যা তাদের কৌতুহলী মনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।কঠিন সমস্যার সমাধানে ব্যস্ত থাকলে এইসব উন্নত বুদ্ধির শিক্ষার্থীরা শ্রেণীতে শৃঙ্খলা সমস্যা তৈরি করতে পারে না। ফলে শিখনের কাজে সুবিধা হয়।তবে একই শ্রেণীতে উন্নত বুদ্ধি ও সাধারণ বুদ্ধি সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় উন্নত বুদ্ধি শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে থাকতে কঠিন কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
- উন্নত মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষণীয় বিষয় আয়ত্ত করার গতি অনেক বেশি। সেই কারণে এমন ব্যবস্থা করা দরকার যাতে তারা অন্যদের থেকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। অনেক সময় এদের বয়স অপেক্ষা উচ্চশ্রেণীর পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়।কিন্তু এই ব্যবস্থা নেতিবাচক দিকও আছে। তাদের বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক শিক্ষার সঙ্গে মেলামেশা করার ফলে তাদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশ বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিক্ষক সর্বদা যদি তাদের প্রতি খেয়াল না রাখেন তাহলে কোনো বিশেষ বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানের ঘাটতি থেকে যেতে পারে।সেক্ষেত্রে উঁচু ক্লাসে ওঠার পর সমস্যা তৈরি হয় তৃতীয় একটি ব্যবস্থায় বলা হয়েছে, এসব ব্যতিক্রমী শিশুদের জন্য পৃথক শ্রেণী করা দরকার। উন্নত মানের পাঠক্রম অনুসরণ করে শিক্ষাদানে উন্নত মানের জ্ঞান আহরণ দ্রুতহারে হয়। তবে এক্ষেত্রেও এইসব শিক্ষার্থীদের অবাঞ্ছিত অহংবোধ জন্মাতে পারে যা তাদের তাদের সামাজিক অভিযোজনে সমস্যা সৃষ্টি করে। [1]
অর্থাৎ, উন্নত মেধা সম্পন্ন শিশুদের নিরাপত্তার চাহিদা বেশি থাকে, তাই মা - বাবা বা অন্য স্নেহের সম্পর্কে কারও কাছে থাকতে পছন্দ করে।
সবসময় কিছু না কিছু জানার চাহিদা থাকে। বড়দের কর্তব্য তাদের জানার চাহিদাকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া।
বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন, কিন্তু অবাঞ্ছিত অহং যাতে দূর হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার মতে, এইভাবে বলা যেতে পারে, তুমি জান তো কী হয়েছে? তুমি যেটা জান অন্যদেরও জানাও। জ্ঞান ভাগ কর দেখ কত ভালো লাগবে।
তাদের সুন্দর করে পরিচর্যা করলে আমাদের সমাজও সুন্দর হবে।
মেধাবী হয়েও যদি কেউ হাল ছেড়ে দেয় বা চেষ্টা না করে, তবে সে হারিয়ে যাবে। মেধাবী হলে খুব তাড়াতাড়ি সব বিষয় আয়ত্ব করা যায় এটা ঠিক, কিন্তু জীবনে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটবে কেউ জানি না। তাই তাদের ব্যর্থতা সম্পর্কেও সচেতন করতে হবে, যাতে সেই সময় মানসিক দৃঢ়তা ধরে রাখে। দুঃখ - কষ্ট পেলেও ঘুরে লড়াই করার দম থাকবে।
ধন্যবাদ। 🙂
H.M Arif
No comments:
Post a Comment