Tuesday, July 7, 2020

১৮ বছর বয়সে আপনি কোন পরামর্শ দিবেন?


১৮ বছরের একটি ছেলে অথবা মেয়েকে আমি নিচের পরামর্শগুলো দিবো । আমি মাঝে মাঝে ভাবি ওই বয়সটাতে যদি এমন কেউ থাকতো যে এই কথাগুলো বলে দিতো, তাহলে আমি আজকের চেয়ে আরো উন্নত জীবন পেতাম ।

১) আবেগের জলে নিজেকে জলাঞ্জলি দিয়ো না। নিজের জন্য বাঁচো, পরিবার অথবা অন্য কারো জন্য নয়।

তুমি যেটা সত্যিকার অর্থে হতে চাও সেটার জন্যই শ্রম দাও । নিজেকে প্রশ্ন করো- "আজ থেকে ১০ বছর পর আমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাই ?"

২) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তোমার যেটা আছে সেটার জন্য !

ধরে নাও- এখন তোমার যেটা নেই সেটার যোগ্য তুমি নও (অথবা সেটা তোমার পাওয়ার কথা না), আর যেটা আছে সেটাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করো ।

৩) তুমি আজ পরীক্ষায় কি ফলাফল করলে তাতে কিছুই যায় আসে না । বাস্তব জীবন নিচের ছবির মতো ।

এমনকি কোন প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করছো সেটাতেও কিছু যায় আসে না । গুরুত্বপূর্ণ হলো- "আজ থেকে ঠিক এক যুগ পরে তোমার অবস্থান কোথায় হবে ।"

মনে রাখবে পরীক্ষার খাতা আর জীবনের খাতা দুটোই আলাদা । জীবনের খাতায় সাফল্য অর্জন করার জন্য একটু ভিন্নভাবে তোমাকে চিন্তা করতে হবে । একসময় দেখবে তোমার ক্লাসের সেরা ছাত্রটা রাস্তার মোড়ে মুদির দোকানে তেল বিক্রি করছে, আর যাকে তুমি পাত্তাই দিতে না সেই ছেলে অথবা মেয়েটার কাছে শত শত লোক চাকরিরি জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে । এটি আমি একটি উপমা দিয়ে বোঝালাম মাত্র ।

তাই সমাজকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিছু করো না, বরং নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে দুনির্বার গতিতে এগিয়ে যাও ।

৪) অধ্যায়ন করার পাশাপাশি জীবিকার জন্য কিছু করো ।

এটা তোমাকে বাস্তবতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে এবং ভবিষ্যতে তোমার পথ চলা অনেক সহজ করে দিবে । বিশ্বাস করো, এই সামান্য অভিজ্ঞতা তোমাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে যখন তুমি ছাত্রজীবনের পথ চুকিয়ে কর্ম জীবনে প্রবেশ করবে ।

৫) এখন থেকেই দান করার অভ্যাস করো ।

ছোট ছোট করে করো । রাস্তার পাশে অসহায় ভিখারিকে দেখে নাক না সিটকিয়ে বরং তোমার টিফিনের পয়সা থেকে একটি ওকে দাও ।

তোমার বাবা-মা এই দান করার মানসিকতা পছন্দ করবে না, আমি জানি । তারা বলবে “ছাত্রজীবনে এগুলির প্রয়োজন নেই ।’’

কিন্তু মনে রাখবে ভালো কাজের অভ্যাস ছাত্রজীবন থেকেই করতে হয় ।

৬) প্রতিযোগিতা করার মনোভাব কমাও, বরং সহযোগিতা করো ।

প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে তুমি অন্ধের মতো দৌড়াবে- হয়তো সামনে এগিয়েও যাবে, কিন্তু একসময় হাপিয়ে যাবে। তাই তোমার ক্লাসের কোনো পিছিয়ে থাকা বন্ধুকে তোমার নোট খাতা দিয়ে সহায়তা করো । দেখবে তখন তুমি প্রতিযোগিতা ছাড়াই অনেক কিছু শিখতে পারবে, এবং সকলের ভালোবাসায় সিক্ত হবে !

৭) "গাছের মতো হও, মরা পাতাদের ঝরে যেতে দাও"- (রুমি) ।

আমি জানি তোমার অভিমান আছে, রাগ আছে, ব্যর্থতা আছে । এমনও হতে পারে তোমার আরেক ভাই অথবা বোন পরিবারের কাছ থেকে বেশি সুযোগ পাচ্ছে, আর তোমাকে নিয়ে তেমন কেউ কিছু ভাবছে না । আসলে এরকম সবার ক্ষেত্রেই হয় । কিন্তু তোমার শোক এবং ব্যর্থতাকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে ।

৮) ভালো শ্রোতা হও ।

আগে শুনো, কিন্তু পাশাপাশি প্রশ্ন করতেও শিখ । এমন কিছু প্রশ্ন করো যে প্রশ্ন আগে কেউ করে নি । এটা তোমার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবে এবং কৌতুহলী করে তুলবে । পৃথিবীর সকল সৃজনশীল মানুষেরাই কৌতুহলী।

৯) ভালোবাসো !

কিন্তু অন্ধ ভালোবাসা থেকে বিরত থাকো । যৌক্তিক হও ।

১০) স্মৃতি সঞ্চয় করো ।

সব সম্পদই ক্ষণস্থায়ী এবং নশ্বর । কিন্তু স্মৃতি অনেকদিন বেঁচে থাকে; সুদীর্ঘকাল বেঁচে থাকে ।

১৮ বছরের গল্পগুলো জীবনের শ্রেষ্ঠ্য সাহিত্য । তাই গল্প জমাও, জীবনের গভীরতম সুখকে উপলব্ধি করো, কিছু শিহরণ অথবা প্রথম প্রেমের কবিতা লেখো- এরপর ভালো না লাগলে ছুড়ে ফেলে দাও । ঠিক ঐযে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো -

তোমাকে দিলাম, নবীন কিশোর, ইচ্ছে হয় তো অঙ্গে জড়াও

অথবা ঘৃণায় দূরে ফেলে দাও, যা খুশি তোমার

তোমাকে আমার তোমার বয়সী সব কিছু দিতে বড় সাধ হয়।

১১) শুধুমাত্র কাগজের পুস্তকে মুখ বুজে থেকো না ।

প্রকৃতি এবং জগৎকে অধ্যায়ন করো । ভ্রমণ করো ।

১২) পরিমিত পরিমান ঘুমাও ।

আমি নিশ্চিত জানি তোমার শিক্ষকরা বলবে ঘুম বন্ধ করে পড়া মুখস্ত করতে । তোমার মতো বয়সে সবাই ভাবে, না ঘুমিয়ে না খেয়ে সারাদিন রাত অধ্যায়ন করলেই বুঝি সকলের সেরা হওয়া যাবে ।

আসলে দোষটা তোমার নয়, কারণ তোমার মতো সময়ে কেউ আসলে বুঝে উঠতে পারে না "সকলের সেরা" হওয়া বলতে আসলে কি বোঝানো হয়? আদৌ কি সকলের সেরা হওয়ার দরকার আছে ।

তাই নিজের স্বস্থ্যের প্রতি যত্ন নাও, পর্যাপ্ত ঘুম তোমাকে মানুষিক প্রশান্তি দিবে এবং সৃজনশীলতাকে বৃদ্ধি করবে ।

১৩ ) তুমি যদি নারী হও তাহলে সুযোগ এবং অধিকারের আশায় বসে থেকো না । কারণ সুযোগ কারো জন্যই এমনিতে এসে ধরা দিবে না । নিজের যোগ্যতা দিয়ে অন্য সবার চেয়ে পৃথক করো ।

রূপ চর্চার পেছনে সময় কম ব্যয় করো, হাতের কাছ থেকে মেক-আপ বক্সটি দূরে রাখো, বই পড়ো, চিন্তা করো, রুচিশীল এবং সুশীল ব্যক্তিত্ব গঠন করো । কারণ তুমিও চাও না যে তোমার ভবিষ্যৎ পাশের বাসার খালাম্মার মতোই হোক, তোমার স্বপ্ন হবে মহিয়সী নারীদের মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করার !


H.M Arif

No comments:

Post a Comment