Friday, June 5, 2020

জীবনে প্রকৃত সুখী হওয়ার দশটি মূলমন্ত্র কী insaf trust.com



জীবনটাকে আর কতটুকুই বা দেখলাম! সুখী হওয়ার মূলমন্ত্র কী?

এই প্রশ্নের উত্তরে নিজের ঝুলি থেকে কিছু বের করতে হলে কপটতাই করা হবে।

এত সুন্দর একটা প্রশ্ন। ছেড়ে দিতে গিয়েও পারলাম না। শেষে মাথায় এলো পছন্দের লেখকদের সুখী হওয়ার মূলমন্ত্রগুলো ভাগাভাগি করতে পারি।

এখানে ইংরেজি কোরা থেকে ১০ জন সেরা লেখকের সুখী হওয়ার মূলমন্ত্র ভাগাভাগি করছি।


১। Anubhav Jain

মশলা, লবণ, মরিচ, লেবু এসবের মতো অমিষ্টি জাতীয় খাবার আছে বলেই আমাদের মিষ্টি যেমন মিষ্টি লাগে, তেমনি—ব্যথা, সমস্যা, কিছুটা চাপ এবং সংগ্রাম আছে বলেই সুখের এত মূল্য।

অন্যান্য আবেগের স্বাদ না নিয়ে কেবল সুখবোধ করা সম্ভব নয়। এবং আপনি যদি এমন সুযোগ পেয়েও যান তবে খুব শীঘ্রই সুখ তার মূল্য হারাতে পারে।

খুব বেশী কিছু প্রত্যাশা করা ছাড়াই জীবনযাপন করুন। সুখ উপভোগ করুন এবং দুর্ভোগকে শ্রদ্ধা করুন।

২। Ramit Sethi

কাউকে প্রশংসা করা

  • কাজের লোকটি যখন সকালবেলা আপনার হাতে গরম ধোঁয়াওঠা চা দিয়ে যায়, চায়ে একটা চুমুক দিয়ে তাকে বলুন, "চা'টা সেরা হয়েছে।"
  • কোনও সহকর্মীর সাথে যখন সভা করছেন, তাকে বলুন আপনার তার শার্ট/শাড়িটি পছন্দ হয়েছে। জিজ্ঞাসা করুন শার্ট/শাড়িটি কোথায় পেয়েছে।
  • রোজ ব্যায়াম করা আপনার কোনও বন্ধুর সাথে দেখা হলে, তাকে বলুন, "আরে তুমি জান আমি সত্যিই তোমার প্রশংসা করি। তুমি এমন একজন ব্যক্তি যে কখনই কোনও ব্যায়াম মিস করে না।"

এর ফলে যা হবে— আপনি অন্যকে খুশি করার সময় নিজে খুশি হবেন।

৩। Sean Kernan

ভারসাম্য রেখে চলা

আমার মন্ত্রটি বরাবরই ভারসাম্য।

কিছু সময় আপনাকে নিখুঁত পরিপাটী হতে হবে। অন্য সময়ে, আপনাকে আপনার সর্বশেষ বিব্রতকর অবস্থা হেসে উড়িয়ে দিতে শিখতে হবে।

৪। James Altucher

যদি অসুখী হওয়ার কারণ অবস্থা (স্ট্যাটাস) হয়ে থাকে তবে তা নির্ধারণ করা

উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে আপনার সম্পর্কে অন্যরা কি ভাবে না ভাবে সেসব মতামত পরিবর্তনের চেষ্টা করার চেয়ে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর এবং উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করুন।

যেমন- আমি লিখি। আমার আইডিয়া আছে। আমি পড়ি। আমি তাই করি যা আমার সুযোগ বৃদ্ধি করে।

আমি আমার সম্পর্কে অন্য কারও প্রতিচ্ছবি উন্নত না করে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করি।

৫। Dushka Zapata

বিশ্বাস করা যে যা ঘটে তা আমাদের সর্বোত্তম স্বার্থে ঘটে

এটি হ'ল আত্মসমর্পণের আসল সংজ্ঞা। হাল ছেড়ে না দেয়া কিন্তু বিশ্বাস রাখা যে সবকিছু একসময় ঠিক মিলে যাবে।

৬। Nela Canovic

নিজের ভিতরের বাচ্চাটির সাথে বন্ধুত্ব করা

আমরা সকলেই বড় হয়েছি এবং প্রাপ্তবয়স্কের মত দায়িত্ব পালন করি তার অর্থ এই নয় যে আমাদের মধ্যে থাকা বাচ্চাটিকে আমাদের উপেক্ষা করা উচিত।

তাকে স্বীকার করুন, তাকে জিজ্ঞেস করুন সে আজ কী করতে চায়, নিজেকে নির্বোধ হওয়ার জন্য কিছু সময় দিন।

  • একটি আইসক্রিম নিন এবং ধীরে ধীরে খেতে খেতে কোনো পার্কের মধ্য দিয়ে হাঁটুন।
  • আপনার জলের রঙগুলি বের করুন এবং কেবল মজার জন্য কিছু আঁকুন।
  • স্ট্র দিয়ে একটি লেমনেড, একটি মিল্কশেক বা বুদবুদ ওঠা চা পান করুন এবং সেটি উপভোগ করুন।
  • ইউটিউবে আপনার প্রিয় কার্টুন দেখুন। আর খুব জোরে হাসুন।

৭। Lukas Schwekendiek

সত্যিকারের সুখ তখনই ঘটে যখন আমরা নিজেদের তৈরি খাঁচার বাইরে পা রাখি

  • যখন আমরা কারও কাছ থেকে না লুকিয়ে বা ঠিক না বেঠিক সেসব না ভেবে সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রকাশ্যে কাঁদতে পারি।
  • আমরা যত জায়গাতেই যায় আর হাসি মসকরা করি আর লোকেরা আমাদের দেখে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকা সত্ত্বেও যখন আমরা আমরাই হয়ে উঠতে পারি।
  • যখন আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোনোরকম বিচার (জাজ) না করে নিজেকে দেখে গর্ব বোধ করতে পারি।

আপনি যখন বিশ্বের এইসব নিয়ম, আপনার নিজের বানান নিয়ম এবং অন্য লোকেদের নিয়মগুলি পরোয়া করা বন্ধ করবেন এবং নিজের জীবনকে পুরোপুরি স্বীকার করে নিবেন তখনি সুখের দেখা পাবেন।

৮। Ryan Holiday

অবজ্ঞার চর্চা করা

আমি আমার স্ত্রী, ছেলে, ঘর, পেশা'কে ভালোবাসি এবং অনেক বন্ধুবান্ধব আছে যাদের আমি প্রশংসা করি এবং শ্রদ্ধা করি।

এই সবকিছু এতটাই নিখুঁত এবং অনিবার্য যে এই জিনিসগুলি দিয়ে পুরো জীবন পার করে দেয়ার চিন্তা করাটা খুব লোভনীয়। কিন্তু এটি বিপজ্জনক এবং বিভ্রান্তিকর।

কারণ আর সকল বাহ্যিক জিনিসের মতো এগুলোও আমাকে হতাশ করতে পারে, মর্মান্তিক কোনো দুর্ঘটনা আমার কাছ থেকে এগুলো কেঁড়ে নিতে পারে। যে কোনও কিছুই ঘটতে পারে।

তাই সবকিছুর প্রতি সামান্য অবজ্ঞা হ'ল উদ্দেশ্যমূলকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির জন্য সহায়ক।

সবকিছুই আপনাকে চুষে ফেলতে পারে। জিনিসের আসল মর্ম উপলব্ধি করাই সুখের রহস্য।

৯। Awdhesh Singh

আমার সুখের মূল কথাটি হল আমি কখনই সুখের পিছনে ছুটি না।

বরং যা কিছু আমার এবং বাকিদের জীবনে ইতিবাচক পার্থক্য আনতে পারে আমি সেসবে মনোনিবেশ করি। যেমন—

  • নিজেকে ফিট ও সুস্থ রাখার জন্য আমি নিয়মিত হাঁটি এবং ব্যায়াম করি
  • আমি স্বাস্থ্যকর খাবার খাই
  • আমি অভিযোগকারী লোকেদের এড়িয়ে চলি
  • আমি প্রতিদিন পড়ি এবং আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করি
  • আমি প্রতিদিন লিখি যেন আমার জ্ঞান এবং জীবনের অভিজ্ঞতা অন্য লোকেদের সাহায্যে কাজে লাগে

আমি গীতার নীতিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে— "আমাদের কর্মফল নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমাদের অবশ্যই আমাদের সমস্ত কাজ করে যেতে হবে।"

কষ্টকর বলে আমাদের সঠিক কাজগুলো এড়িয়ে যাওয়া বা ভুল কাজগুলি মনোরম বলে সেগুলি করা উচিত নয়।

১০। Shovan Chowdhury

আমার মন্ত্র খুব সাধারণ : আমি আমার প্রত্যাশার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছি। আমি সর্বদা বিশ্বাস করি যে এই পৃথিবীতে আমার কোনোকিছু পাওয়ার অধিকার নেই। যাই হোক না কেন, সেটা আমার কাছে একটা বোনাস।

আমার এমবিএ ডিগ্রি, চাকরী, সুস্বাস্থ্য, থাকার জন্য সুন্দর ফ্ল্যাট, ফ্রিজ ভর্তি খাবার, ২৪ ঘন্টা ইন্টারনেট সুবিধা, চাইলেই মানুষকে সাহায্য করার সুযোগ- সবকিছুই আমার জন্য বোনাস।

আমার চারপাশের লোকেরা আমাকে 'ব্যর্থ' বলে ডাকে এবং বলে যে আমি জীবনের এই ইঁদুর দৌড়ে অনেক পিছিয়ে আছি। তবে তাতে আমার আপত্তি নেই।

আমি হাসি, স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি এবং নিজেকে উন্নত করার জন্য আরেকটা লক্ষ্য স্থির করি।

“একটি সুখী জীবন গড়ার জন্য খুব অল্প কিছু প্রয়োজন হয়, সব আপনার নিজের মধ্যেই আছে; আপনার চিন্তাভাবনাতে"— মার্কাস অরেলিয়াস


সুখ? সুখী হতে আর কী লাগে যদি আপনার একটা সুন্দর স্বাস্থ্য থাকে?!

আমেরিকার সবথেকে বয়স্ক যুদ্ধপ্রবীণ, ১১২ বছর বয়সের রিচার্ড আরভিন ওভারটন যেমনটা বলেছেন—

"আমার সুস্বাস্থ্য আছে এবং যতক্ষণ আমার সুস্বাস্থ্য থাকবে আমি আনন্দে নাচতে থাকব।"


H.M Arif Hossain.


No comments:

Post a Comment