সময় ব্যবস্থাপনার উপায়
অংশ ১ঃ-
১. কাজকে গুরুত্ব অনুযায়ী তালিকাবদ্ধ করা।
২. অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোকে ভাগ করে কোনটি করতে কত সময় লাগে এবং কখন করতে হবে তার রুটিন করে লিখে রাখা। অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে করা।
৩. দৈনিক অপরিহার্য কাজ যেমন খাওয়া, ঘুৃম, পরিবারের জন্য সময়, ফ্রেশ হওয়ার জন্য যে সময় লাগে সেটা প্রতিদিন একই রকম তাই এর জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে বাকি কাজ গুলোর জন্য সময় নির্ধারণ করা।
৪. অফিসের কাজ অফিসে এবং বাসার কাজ বাসায় করা।
৫. সময়ের কাজ সময়ে করা, সময় হাতে রেখে পরে করব বলে ফেলে না রাখা।
৬. রুটিনে নির্ধারিত সময়ে কোন কাজ শেষ না হলেও সেটা ওভাবে রেখে অন্য কাজ শুরু করা এবং পরবর্তী অন্য কোন কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করে অসমাপ্ত কাজ শেষ করা, এভাবে সমন্বয় করা।
৭. রুটিন বা নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা।
অংশ ২ঃ-
সময় ব্যবস্থাপনার কয়েকটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. হতাশা-অস্থিরতা দূর করা
মন থেকে সব ধরনের হতাশা, আক্ষেপ, ক্ষোভ, বিষণ্নতা এবং অস্থিরতাকে একেবারে ধুয়ে-মুছে বিদায় করে দাও।কারণ এগুলো তোমার মনোযোগ নষ্ট করে এবং পড়াশোনা, অধ্যয়ন, ক্যারিয়ার গঠন তথা আত্মগঠনের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, গড়িমসি করা-আলস্যকে প্রশ্রয় দেয়। যখন তুমি পড়াশোনা করছ বা লিখছ, তখন তোমার ফোনের রিংটোন এবং ভাইব্রেশন বন্ধ করে দাও এবং এটিকে এমন একটি ড্রয়ারের মধ্যে রাখ, যেখানে কল এবং ম্যাসেজের উত্তর দিতে তুমি প্রলুব্ধ হবে না। বড়জোর প্রতি ঘন্টায় একবার তোমার ফোন চেক করতে পার। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইউটিউব এবং অন্যান্য ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী গুলোকে বন্ধ করে দাও। যখন তুমি রিলাক্সে থাক, শুধুমাত্র তখন এগুলো একটু দেখতে পার।একটা কথা আছে না, ‘কাজের মধ্যে ডুবে থাকা’? আসলে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।এর মাধ্যমেই কাজেই আনন্দ পাওয়া যায়। ইংরেজিতে একে বলে ঋষড়, বাংলায় একে বলা যায় সাবলীলতা। মূলত, এটি কাজে প্রচ- প্রাণশক্তি প্রদান করে, কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে সাহায্য করে। কাজের মধ্যে যদি আনন্দ বা প্রাণশক্তি না থাকে, তাহলে সেই কাজে কখনো দক্ষতা অর্জন করা যায় না।
২. অগ্রাধিকার নির্ধারণ
অনেক ছেলেকে দেখি, ঘন্টার পর ঘন্টা ফেইসবুকে আড্ডা দিয়ে কাটায়।আবার, ফেসবুকের কারণে বন্ধু-বান্ধবের পরিধিও অনেক বেড়ে যাওয়ায় মোবাইলে কথা বলেও অনেক সময় নষ্ট করে।অনেকের তো এখন এগুলোতে রীতিমত আসক্ত হয়ে পড়েছে।তারা সারাদিন ফেসবুক-মোবাইল-আড্ডায় যত সময় ব্যয় করে পড়াশোনাতেও এত সময় ব্যয় করে না।তাই তোমাকে ঠিক করতে হবে, কোনটা তোমার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ, নিজের ক্যারিয়ার, নাকি বন্ধু-বান্ধব।ফেসবুকে আসক্ত ছেলে-মেয়েরা সারাদিন যত সময় ফেইসবুক আর মোবাইলে কথা বলে কাটায়, কোন বড় ব্যবসায়ী বা ডিজিটাল মার্কেটাররাও এত সময় ব্যয় করে না।সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, এখন স্কুলের ছেলেদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ ভিত্তিক পেইজ দেখা যায়, যেগুলোকে কেন্দ্র করে তাদেরকে দলাদলিতে লিপ্ত হতে দেখা যায়।উঠতি বয়সের এসব ছেলেরা এসব গ্রুপের পাল্লায় পড়ে নিজেদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করছে।কারণ, তারা পড়াশোনার পরিবর্তে সারাদিন এসব দলাদলি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে।এসব ছেলেরা একবারও কি ভেবে দ্যাখে- তারা কেন এসব মরীচিকার পেছনে ছুটে চলছে?তারা কি ভেবে দ্যাখে, তার ক্যারিয়ারের কী অবস্থা? লক্ষ্য পূরণের জন্য তার দিনে কত ঘন্টা পড়াশোনা করা প্রয়োজন আর একজন ছাত্রের সারাদিন সর্বোচ্চ কত ঘন্টা মোবাইলে কথা বলা বা ফেইসবুকে ব্যয় করা উচিত?হাতের কাজ ফেলে রেখে কোন পাগলে গল্প করে আড্ডা দিয়ে বেড়ায়?
৩. ক্যালেন্ডার এবং রুটিন ব্যবহার
বছরের শুরুতে সবার আগে তোমার সিলেবাস বা বাৎসরিক কোর্স-আউটলাইনটা সামনে নিয়ে বসো।তারপর ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখ তুমি আসলে কতদিন স্টাডি ডে পাচ্ছো।এটা বের করার জন্য তোমাকে দেখতে হবে সারা বছরে মোট কতদিন বিদ্যালয় বন্ধ বা ছুটি থাকবে।এই ছুটির দিনগুলো বাদ দিলে যে কদিন হাতে থাকবে তাই আসলে স্টাডি ডে।কারণ ছুটির দিনগুলোতে আসলে পড়াশোনা হয় না।বিশেষ করে স্কুলের স্টুডেন্টরা তো একটা অজুহাত পেলেই আর পড়াশোনা করতে চায় না, আর ছুটির দিনগুলোতে তো নয়ই।দেখা গেছে, সারা বছরে সাপ্তাহিক ছুটি, উৎসব, পার্বন নানা কিছু মিলে আমাদের দেশে নব্বই দিনেরও বেশি সময় ছুটি বাবদ চলে যায়।এই সময়টায় বিশেষ করে ছেলেরা হৈ হৈ রৈ রৈ করে পার করে দেয়।কাজেই ছুটির দিন বাদ দিলে বাকি যে সময়গুলো থাকে তার মধ্যেই তোমার সিলেবাস বা কোর্স আউট লাইনের পড়া শেষ করতে হবে।আর রেজাল্ট যদি ভাল করতে চাও, তাহলে এই সময়েরও অন্ততঃ এক তৃতীয়াংস সময় আগে সিলেবাসের পড়া শেষ করতে হবে, আর বাকি সময়টাতে রিভাজ এবং প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা দিতে হবে।আর এটা করতে হলে তোমাকে আসলে ছয় মাসের মধ্যেই পুরো সিলেবাসের পড়া শেষ করার টার্গেট নিয়ে সেই অনুযায়ী প্রতিটা সাবজেক্টের জন্য ডেইলি রুটিন তৈরি করতে হবে।তোমাকে বের করতে হবে ছয় মাসের মধ্যে সিলেবাস শেষ করতে হলে প্রতিদিন কোন সাবজেক্টটি কত সময় করে পড়তে হবে।এইভাবে পুরো বছরের পড়াশোনার ছক যদি তুমি বছরের শুরুতেই করে ফেলতে পারো, তাহলে তোমার সময়গুলো অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ব্যয় হবে এবং কোন সময় নষ্ট হবে না।ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তুমি তোমার সিলেবাস শেষ করতে পারলে তুমি অনেক হাল্কা বোধ করতে পারবে এবং বাকি সময়টাতে তুমি অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দের সাথে রিভাইজ দিতে পারবে বা বিভিন্ন টেস্ট পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে ঝালাই করে নিতে পারবে।এজন্য অত্যন্ত সিরিয়াসলি তোমাকে অবশ্যই ডেইলি রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করতে হবে এবং কোন মিস দেয়া যাবে না।যদি হঠাৎ কোন দিন মিস হয়েই যায়, তাহলে বন্ধের দিন সেটি পূরণ করে নিতে হবে।
৪. মাসিক পাঠ-পরিকল্পনা এবং চেকলিস্ট ব্যবহার
এইভাবে ডেইলি রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতি মাসের শুরুতে তুমি একটি পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারো এবং মাস শেষে পাঠ-পর্যালোচনা করে দেখতে পারো যে, তোমার মাসিক পাঠ পরিকল্পনা বা এসাইনমেন্টগুলো কতটুকু সম্পন্ন করতে পেরেছো।যদি না হয়ে থাকে তাহলে নতুন মাসে ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারো।এজন্য তুমি একটি চেকলিস্ট ব্যবহার করতে পারো।
চেকলিস্ট হল একটি to do list।তুমি তোমার কাজের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে what to do লিস্ট বা তালিকা তৈরি করতে পার।এটি প্রতিদিনের জন্য হতে পারে; অথবা এক সপ্তাহ বা এক মাসের জন্যও হতে পারে। তবে সবচেয়ে ভাল হয় প্রতি মাসের জন্য করলে।তাহলে পুরো মাসের কাজের ছক তোমার মাথার মধ্যে থাকবে। এটি কাজের প্রতি তোমার মনোযোগ নিশ্চিত করার একটি দুর্দান্ত উপায়।প্রতিদিন সকালে এই তালিকা চেক করতে হবে এবং তালিকা ধরে ধরে একটি একটি করে কাজ শেষ করতে হবে।যে কাজটি সম্পাদন করা হবে, সেটির পাশে টিক চিহ্ন দিতে হবে।তাহলে কয়টি ও কি কি কাজ শেষ হল সে সম্পর্কে একটি ধারণাও তুমি পেয়ে যাবে।
৫.নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা তৈরি বা সময় বন্টন
টুডু লিস্টের কাজ গুলোর জন্য সময়সীমা নির্ধারণ কর এবং তাতে স্থির থাকার চেষ্টা কর।অর্থাৎ, কোন কাজের জন্য কতটুকু সময় ব্যয় করবা তার সময়সীমা নির্ধারণ করা বা সময় বন্টন করা। এটি করতে পারলে সময় নষ্ট হবে না এবং অল্প সময়ে বেশি কাজ করা যাবে। সূত্র: ছাত্রজীবন: সাফল্যের শর্তাবলী
—(মুহাম্মদ আবুল হুসাইন, দৈনিক সংগ্রাম, সময় ব্যবস্থাপনার কয়েকটি কৌশল, ১৭-০৭-২০১৯)[1]
অংশ ৩ঃ-
সময়কে কাজে লাগানোর ১০ টি উপায়
পড়াশুনা থেকে শুরু করে কর্মজীবন সব জায়গায় দেখবেন আমরা খুব সাধারণ একটা ব্যাপারের সম্মুখীন হচ্ছি, আর সেটা হলো আমাদের সময়ের খুব অভাব! আমরা কোনো অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করতে পারলাম না, খুব সহজেই বলে ফেলি সময় ছিল না অথবা এমনও অনেক সময় বলি পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো না কারণ সময় ছিল না।
According to Atlassian একজন Average মানুষ ৩১ ঘণ্টা নষ্ট করে অপ্রয়োজনীয় কাজে। অথচ দেখবেন সফল ব্যক্তিত্বরা তাদের ২৪ ঘণ্টার প্রতি ৫ মিনিটকে ব্যবহার করছে। এটাকে বলে টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল। এই স্কিল ব্যবহার করে তারা তাদের প্রোডাক্টিভিটিকে বাড়িয়ে তুলছে।
“সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।” এই কথাটি আসলেই সত্য। সময় একবার চলে গেলে তা কখনোই ফিরে আসবে না। যে যতবেশি কার্যকরভাবে সময়ের ব্যবস্থাপনা করতে পারে সে ততবেশি সফল। তাই সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো খুব জরুরি।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সময়কে কাজে লাগানোর কিছু কার্যকরী উপায়:
সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন
বিখ্যাত মনীষী Benjamin Franklin বলতেন, “ভোরের মুখে সোনা রং থাকে”।
সকালে উঠার প্রয়োজনীয়তা এই উপমা থেকেই বোঝা যায়। যারা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেন অন্যদের তুলনায় কাজ করার সময় বেশি পান। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কোনো ব্যক্তি ভোরে উঠেন, তখন অন্যদের তুলনায় তিনি বেশি সক্রিয় থাকেন, প্রোডাক্টিভিটিও বেড়ে যায়। কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে, পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অর্জনে অধিক পারদর্শী হন। সকালে ঘুম থেকে উঠলে জীবনে ইতিবাচক দিক বেড়ে যায়, হতাশায় কম ভোগেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এক গবেষণায় দেখেছেন, যারা ভোরে ঘুম থেকে উঠে, তারা দেরিতে ঘুম থেকে উঠা শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো ফল করে। ঘুমের মান ভালো হওয়া ও কাজের উৎপাদনশীলতার সঙ্গেও একে যুক্ত করা যায়।
Richard Branson বলেছেন, “আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেনো আমি সবসময় নিয়ম মেনে ভোর ৫ টায় উঠার চেষ্টা করি। সকালে উঠার ফলে আমি ব্যায়াম করার সময় পাই এবং পরবর্তী সময়ে পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটাতে পারি। এতে আমার মন এবং মস্তিষ্ক উভয়ই খুব ফুরফুরে থাকে যা আমাকে ব্যবসায় মনোযোগী হতে সাহায্য করে।”
ব্র্যানসনের সাথে এমন আরো অনেক সফল তারকা ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যারা কিনা সবসময় সকালে উঠেন।
গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই সকাল ৬.৩০টায় ঘুম থেকে উঠেন, এপল কোম্পানীর সিইও টিম কুক ভোর ৪টায় উঠেন, মিশেল ওবামা ভোর ৪.৩০টায় উঠেন প্রতিদিন।
জরিপে দেখা গিয়েছে প্রায় সকল সফল ব্যক্তি সকালে ঘুম থেকে উঠেন, এতে করে তাদের কাজের গতি এবং আগ্রহ বেড়ে যায়।
মেডিটেশন
একাগ্র মনের চিন্তার নাম meditation। এটি শুধু মনকেই কেন্দ্রীভূত করে জাগিয়ে তোলে না, শরীর যন্ত্রেরও উপকার করে। আর সত্যিকথা বলতে কি, মানুষের শক্তির উৎস হলো মন। মন যখন শান্ত থাকে মানুষ তার মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। আর মনকে স্থির করার সফলতম পদ্ধতি হলো মেডিটেশন(meditation)। আপনার মন স্থির থাকলে আপনার কাজের গতি এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যাবে। বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাবান়্ ও প্রভাবশালী নারী Oprah Winfrey নিয়মিত Transcendental Meditation করে থাকেন। একটি জরিপে দেখা গিয়েছে, যারা নিয়মিত ধ্যান করে অন্যদের তুলনায় বেশি সৃজনশীল হয়।
নিয়মিত একটু সময়ের জন্য মেডিটেশন বা ধ্যান করার অভ্যাস আয়ত্ত করুন।
“Meditate. Breathe consciously. Listen. Pay attention. Treasure every moment. Make the connection.”― Oprah Winfrey
To-Do list ব্যবহার করুন
দিনের শুরুতেই সারাদিনের কাজের তালিকা করে ফেলুন। সবসময় একটি নোটবুক রাখুন নিজের কাছে অথবা আপনার স্মার্ট ফোনের To-Do list Apps টি ব্যবহার করতে পারেন। সেখানে সারাদিনের সবগুলো কাজ লিখে ফেলুন। যেকোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে টু-ডু লিস্ট তৈরি করা সবার জন্য অনেক জরুরী। আমাদের সবার জীবনই এখন বেশ ব্যস্ততায় ঘেরা। এই আবেশে হুট করে যেকোনো দরকারি কাজ করার কথা ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। অন্য কোনো কাজ আমরা পারি বা না পারি ভুলে যেতে আমরা ওস্তাদ। সে লক্ষ্যেই টু-ডু লিস্টের প্রচলন হয়েছে। আপনার প্রতিদিনের কাজটি একটি টু-ডু লিস্টের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রতিটি কাজ সেই লিস্ট অনুযায়ী করুন। টু-ডু লিস্ট কোন কাজ জরুরী আর কোন কাজ অপেক্ষাকৃত কম জরুরী তা অগ্রাধিকার করতে সাহায্য করে থাকে। ধরুন, আপনি অফিসের কয়েকটি কাজ টু-ডু লিস্টে লিপিবদ্ধ করে রাখলেন। অতঃপর একটি কাজ শেষ হয়ে এলে সেটির পাশে টিক দিয়ে অপর কাজে হাত দিলেন। এতে কিন্তু সময়কে খুব দারুণভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই নয় কি? এছাড়াও কোনো কাজ শেষ হয়ে গেলে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস বেড়ে যায়। কাজের তালিকা সঠিকভাবে মেইনটেইন করলে আপনার মূল্যবান সময়ের অপচয় হবে না, আপনার কোনো কাজই বাদ পড়বে না এবং সময়মত হবে, ফোকাসও ঠিক থাকবে।
টু-ডু লিস্টের প্রয়োজনীয়তা কতোটা অপরিসীম বুঝতেই পারছেন। আজ থেকেই এটি মেইনটেইন করার অনুশীলন শুরু করুন। কিছুদিন পর নিজের উন্নতি ও অগ্রগতি দেখে নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাবেন।
“Rename your “To-Do” list to your “Opportunities” list. Each day is a treasure chest filled with limitless opportunities; take joy in checking many off your list.”
― Steve Maraboli
কাজের তালিকার সবচেয়ে কঠিন কাজটি সবার আগে করুন
বিখ্যাত লেখক Mark Twain বলেন, “If it’s your job to eat a frog, it’s best to do it first thing in the morning. And If it’s your job to eat two frogs, it’s best to eat the biggest one first.”
মার্ক টোয়েন সকাল সকাল ব্যাঙ খেতে বলেছেন। উনি ব্যাঙ খেতে ভালবাসতেন কিনা জানিনা – তবে ধরে নিচ্ছি ব্যাঙ খাদ্য হিসেবে সুস্বাদু বটে। তা না হলে সকালে ব্যাঙ খাওয়ার কথা উঠবে কেন তার লেখায়? এই উক্তি দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, নিজের কাজের তালিকায় সবচেয়ে কঠিন যেই কাজটি সেই কাজটি সকালে আগে করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এবং কঠিন কাজটি তালিকার শুরুতে লিখুন। পর্যায়ক্রমে সহজ এবং সহজতর। দিনের শুরুতেই কঠিন কাজটি করে ফেললে আপনি থাকবেন টেনশন মুক্ত এবং পরের কাজগুলো করা সহজ হবে। সহজ কাজগুলি আগে করে ফেললে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। কঠিন কাজ করা আরো কঠিন হবে।
Lifehacker | Do everything better এর প্রতিষ্ঠাতা Gina Trapani মতে, “আপনি যখন সকালে কাজ করতে বসবেন তখন আপনার মন এবং মস্তিষ্ক একদম ফ্রেশ থাকবে, আপনাকে অন্যান্য আরো দশটা কাজ নিয়ে ভাবতে হবে না। তাই এই সময়ই সবচেয়ে উপযুক্ত নিজের কঠিন কাজ করার জন্য। এর মাধ্যমে আপনার সবচেয়ে কঠিন কাজ সকাল ১০টার মাঝেই শেষ হয়ে যাবে, পরবর্তীতে বাকি কাজ করতে অনেক সহজ হবে।”
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন
জরিপে দেখা গিয়েছে, দিনের সবচেয়ে বেশি সময় নষ্ট হয় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য। অনেকেই দেখা যায় কাজ করতে করতে ৫ মিনিট পর পর ফোনে টুকুর টুকুর করতে থাকে । ঘনঘন ফোনের নোটিফিকেশন দেখার অভ্যাস আপনার কাজে মন বসানোর ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। আপনার সময় যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য মোবাইল ফোন দূরে কোথাও রাখতে পারেন, মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপের নোটিফিকেশন অফ করে রাখবেন , অবসর সময়ে ব্যবহার করতে পারবেন এমনভাবে ব্যবস্থা করবেন। এতে করে কাজের সময় মনোযোগ বিঘ্নিত হবে না।
“Time is an illusion. Lunchtime doubly so” – Douglas Adams, Humorist & sci-fi novelist (1952 – 2001)
ট্রাফিক জ্যামকে কাজে লাগান
ঢাকার রাস্তায় বের হওয়া মানেই ২ ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকা । এই ট্রাফিক জ্যামকেও আপনি দারুনভাবে কাজে লাগাতে পারেন । জ্যামে বসেই আপনি শুনে নিতে পারেন মোবাইলে রেকর্ড করা লেকচারগুলো অথবা কাজের চাপে সময় পান না জ্যামে বসেই দেখে নিতে পারেন কোন মোটিভিশনাল ভিডিও অথবা আরও শুনতে পারেন AUDIO BOOK। কাজের প্লানিং করতে পারেন জ্যামে বসেই। আপনি কোন ডিজাইন করবেন, কোন কবিতা লিখবেন, কোন বিজনেস প্ল্যান করবেন, কোন ব্লগ লিখবেন – সব নোটপ্যাড এ লিখে রাখতে পারেন জ্যামে বসেই । কথায় আছে If life gives you lemon, make a glass of lemonade! তাই ট্রাফিক জ্যামকে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে না দিয়ে, ঐ সময়টাকেই আপনার কাজে ব্যবহার করুন।
(Pomodoro) পোমোডোরো টেকনিক
(Pomodoro) পোমোডোরো ইটালিয়ান শব্দ যার অর্থ হচ্ছে টমেটো । আশির দশকে Francesco cirillo নামের একজন সাধারণ ছাত্র ছিলেন, উনি অনেক পড়াশুনা করতে চাইতেন, কিন্তু ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারতেন না। এতে তার রেজাল্ট খুব খারাপ হয়। তাই তিনি অনেক চিন্তা করে একটি টেকনিক আবিষ্কার করলেন যার নাম দিলেন পোমোডোরো টেকনিক। সে তার সময়কে পোমোডোরোতে ভাগ করে নিল। প্রতি পোমোডোরো ছিল ৩০ মিনিট করে, যার মধ্যে ২৫ মিনিট মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আর ৫ মিনিট বিশ্রাম।
POMODORO টেকনিক যেটা দু ধরনের কাজ করে:
১। অনেক বেশী কাজ বা পড়ার চাপ থাকলে তা ভাগ করে কমিয়ে দেয়।
২। কম সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে সাহায্য করে যার মানে কর্মদক্ষতা বাড়ায়।
বিশ্বজুড়ে পোমোডোরো এত বিপুলভাবে ব্যবহৃত হওয়ার পেছনে বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু কারণ বের করেছেন। মনকে বশ করা যেতে পারে এই টেকনিক ব্যবহার করে।
১০/১২ টা পোমোডোরো দিয়ে দেখুন একদিনে অনেক কিছু পড়া হয়ে যাবে। একঘেয়ামিও লাগবে না। এই টেকনিক ব্যবহার করে যে কাজ ১ সপ্তাহেও শেষ হতো না , তা ১ ঘন্টাতেই হয়ে যাচ্ছে।
মাল্টিটাস্কিং বন্ধ করুন
মনে করুন আপনি একটি অ্যাসাইনমেন্ট করছেন আবার মোবাইলে টুকুর টুকুর করে চ্যাটিং করছেন ঐ দিকে আবার টিভিটাও খুলে রেখেছেন, আপনি মনে করছেন আপনি একসাথে সবগুলো কাজই করছেন, আসলে কি তাই? না। আমরা অনেকেই মনে করি একসাথে অনেক কাজ করতে পারা বড় কোনো গুন, আসলে মোটেও তা নয়। সত্যি বলতে আমাদের ব্রেন মাল্টিটাস্কিংয়ে অনুপযোগী। মানুষের ব্রেন একসাথে অনেকগুলো কাজের কমান্ড নিতে পারে না। আপনি যদি সব কাজকেই সমানভাবে করতে চান কোন কাজই করতে পারবেন না । ‘If everything is important, than nothing will be’. তাই একটা সময়ে একটা কাজের প্রতি ফোকাস করুন, এতে করে আপনার প্রোডাক্টিভিটি বেড়ে যাবে আপনার কাজও ভালোভাবে শেষ হবে।
“না” বলতে শিখুন
ধরুন আগামীকাল আপনার একটা মিড আছে, একটা অ্যাসাইনমেন্ট ডেডলাইন আছে এর মধ্যেই আপনার বন্ধু ফোন দিয়ে বলল, দোস্ত চল আজকে ঘুরে আসি? কি করবেন? সব বাদ দিয়ে বন্ধুর সাথে যাবেন নাকি আপনার কাজগুলো করবেন? অবশ্যই আপনার কাজগুলো আগে শেষ করবেন। অনেক সময় আমরা ভাবি বন্ধু কি মনে করবে না গেলে, সেক্ষেত্রে ভালোভাবে বন্ধুকে বুঝিয়ে বলুন। জীবনে না বলতে শেখাটা অনেক বেশি জরুরী, সবাইকে খুশি করে চলতে আপনি পারবেন না। আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ক্ষতি হবে সবাইকে খুশি করে চলতে গেলে। তাই কারো অনুরোধ রাখতে না পারলে সরাসরি সুন্দর করে না বলে দিন।
“Saying no can be the ultimate self-care” -CLAUDIA BLACK
কৃতজ্ঞ থাকুন
সবসময় জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন। সারাদিনে ঘটে যাওয়া ভালো জিনিসগুলো লিখে রাখুন, এতে করে দিনশেষে মানসিক শান্তি আসবে এবং নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস গড়ে উঠবে। লাইফ কোচ এবং লেখক টনি রবিনস দৈনিক সকালের একটি সময় রয়েছে যখন তিনি তার জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে। তিনি বলেন, “আমি প্রতিদিন সাড়ে তিন মিনিট ধরে তিনটি বিষয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। মার্ক জুকারবার্গকে চেনে না এমন মানুষ বোধ হয় নেই। তিনি মনে করেন যেকোনো সফলতার পেছনে প্রার্থনা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। প্রতিটি কাজকে আরো বেশি সাহসিকতা নিয়ে শুরু করার মনোবল জোগাতে প্রার্থনার চেয়ে ভালো মাধ্যম আর হতে পারে না। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মার্ক তার প্রথাগত Jewish প্রার্থনা Mi Shebeirach করে ঘুমান। প্রতিটি সফলতার জন্য সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য প্রকাশে তিনি কখনই পিছপা হন না। প্রতিদিন এই নিয়ম আপনাকে সবসময় পজিটিভ চিন্তা করতে সহায়তা করবে। এমনকি আপনার রাগ এবং ভয়ও এই নিয়মের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। তাই প্রতিদিন ৩০ মিনিটের জন্য হলেও আপনার সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করুন।
“True forgiveness is when you can say, “Thank you for that experience.” ― Oprah Winfrey
এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে, এই দিনকে নেব আমরা সেই দিনেরও কাছে। গানের এই কথাটা শুনতে ভাল লাগলেও সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। ২৪ ঘন্টাকে আপনি কিভাবে ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করছে আপনার সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুটোই। জীবন একটাই। সময়কে কাজে লাগান। নয়তো আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। —
No comments:
Post a Comment