Monday, February 1, 2021

মৃত্যুর পর দেখলেন যে আপনি যেই ধর্মপালন করে গেছেন সেটা মিথ্যা। অন্য কোন ধর্ম সত্য? আপনার প্রতিক্রিয়া কী হবে?

খুবই সুন্দর প্রশ্ন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন একজন মানুষের জন্য আর কিছু নেই বোধহয়।

মৃত্যুর পরে যদি দেখি যেই ধর্ম পালন করে গেছি সেটা মিথ্যা - তখন "আশ্চর্য" বা "হতাশ" রিয়্যাক্ট দেয়াই স্বাভাবিক। আসলে, পস্তানো ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। তবে আমি নিশ্চয় দেখবো যে, আমার ধর্মই সত্য

কিন্তু, কেন?

কিসের ভিত্তিতে আমি আত্মবিশ্বাসী? সেই যুক্তিগুলো বিস্তারিত বলছি।

তার আগে বলে নিই। যে কোনো ধর্মবলম্বী হই না কেন, আমরা অনেকেই দু'একটি যুক্তির মাধ্যমে "নিজের ধর্মই উৎকৃষ্ট" এই সিদ্ধান্তে চলে আসে। কিন্তু আসলে তো আমার যুক্তি ভুলও হতে পারে, আমার যুক্তির উপর সত্য নির্ভর করে না, বরং সত্যকে চেনার জন্য কোন্‌ যুক্তি, কোন্‌ মাপকাঠি দিয়ে যাচাই করা দরকার, সেটা জানা জরুরী। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন। আমি মনে করি, সেই জ্ঞান-বুদ্ধি লাভ করার প্রেক্ষিত্রে, আমাদের প্রতিটি সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো "সত্যকে খুঁজে নেয়া"।

আর হ্যাঁ, ধর্মকে যাচাই করার জন্য আমার এই যুক্তিগুলোর চাইতে আরো ভালো যুক্তি যদি আপনার কাছে থাকে, জানাবেন।

কিভাবে যাচাই করা যায়?

অনেক মানুষই বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদেকে দেখে, তাদের দিয়ে ধর্মটিকে বিচার করে। এটা ভুল পদ্ধতি। কারণ: (ক) যে কোনো ধর্মেই খারাপ মানুষ থাকতে দেখা যায়। চোর-ডাকাত-খুনী ইত্যাদি। (খ) সাধারণ কোনো মানুষই একটি ধর্মকে পুরোপুরী পালন করে না। বরং কিছু মানুষ ভালাভাবে মানার চেষ্টা করে, কেও একটু আধটু মেনে যথেষ্ট মনে করে। (গ) তাছাড়া, মানুষই ধর্মকে অনুসরণ করে, ধর্ম মানুষকে জোর করে ভালো-মন্দ বানায় না। ধর্ম মানুষকে ততটুকু প্রভাবিত করতে পারে, মানুষ যতটুকু নিজেকে ধর্মের কাছে আত্মসমর্পন করে।

তাহলে, মানুষকে দিয়ে ধর্ম যাচাই ঠিক হবে না। কোনো ধর্মকে যাচাই করতে হলে সেটার মূল ধর্মগ্রন্থকে যাচাই করতে হবে। আসুন এই দাবীগুলো সত্য কিনা, সেটা চিন্তা করে দেখি:

দাবী১:

সৃষ্টিকর্তার বাণীই শ্রেষ্ঠ, মানুষের তৈরী ধর্ম নয়।

পর্যালোচনা/যাচাই:

সৃষ্টিকর্তা যদি নিজে কোনো জীবন বিধান (গাইডলাইন) দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটার চাইতে ভালা বিধান কি মানুষ তৈরী করতে পারে? অবশ্যই নয়। তাহলে মানুষের তৈরী ধর্মগুলো অবশ্যই উৎকৃষ্ট হতে পারে না। সৃষ্টিকর্তার দেয়া বিধানই উৎকৃষ্ট হবে।

দাবী২:

ধর্মগ্রন্থগুলোর মেয়াদ বা সীমা: সৃষ্টিকর্তা যখন থেকে মানুষ পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে তখন থেকেই যুগে যুগে নবী পাঠিয়েছেন। তবে, পূর্ববর্তী নবীদের পাঠানো হয়েছে একটা নির্দিষ্ট সময় বা একটি নির্দিষ্ট জাতীর জন্য। আর শেষ নবীকে পাঠানো হয়েছে, সমগ্র মানব জাতীর জন্য, সর্বশেষ নবী হিসেবে। আর আল-কুরআন হলো সর্বশেষ ও চুড়ান্ত ধর্মগ্রন্থ।

পর্যালোচনা/যাচাই:

আল-কুরআনে বলা হয়েছে আর কোনো নবী আসবে না, পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত আল-কুরআনই সৃষ্টিকর্তার দেয়া চুড়ান্ত ধর্মগ্রন্থ। এছাড়াও, আল-কুরআনের আগের ধর্মগ্রন্থগুলোতে উল্লেখ আছে যে, পরবর্তীতে নবী আসবেন, আর তখন তাঁকেই অনুসরণ করতে হবে।

দাবী৩:

আল কুরআন অবিকৃত। অন্যদিকে, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলি বিকৃত বা পরিবর্তিত হয়েছে।

পর্যালোচনা/যাচাই:

আল কুরআনের দাবী হলো এটি অবিকৃত থাকবে এবং অবিকৃতই আছে। ওদিকে, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে এক অংশের সাথে অন্য অংশের কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুবই স্পষ্ট বৈপরীত্য পাওয়া যায়। আর সেটা প্রমাণ করে যে, সেসব ধর্মগ্রন্থ মানুষের দ্বারা পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়েছে। তাছাড়াও সেসব ধর্মের অনুসারী/পণ্ডিতরাও স্বীকার করেন যে এটা পরিবর্তি হয়েছে যুগে যুগে। যেমন:
খ্রিস্টান পণ্ডিতগণ বিভিন্ন সময় বাইবেল সংশোধন করে, নতুন সংস্করণ প্রকাশ করে আসছেন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের স্বীকারোক্তি শুনেছি যে, তাদের ধর্ম সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।

দাবী৪:

আল-কুরআন সরাসরি দাবী করে যে, এটাই একমাত্র পূর্ণঙ্গ জীবন বিধান। এটাই সর্বশেষ ও চুড়ান্ত ধর্মগ্রন্থ।

পর্যালোচনা/যাচাই:

অন্য ধর্মাবলম্বিরা প্রত্যেক নিজের ধর্মকে সর্বোৎকৃষ্ট দাবী করতেই পারে। কিন্তু কোনো ধর্মগ্রন্থে এরকম দাবী নেই। আর যদি একাধিক ধর্মগ্রন্থ এরকম দাবী করে, তাহলে আমাদের যাচাই করার কাজটি আরো ব্যাপকভাবে করতে হবে।

এছাড়াও অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থে উল্লেখও নাই, কিন্তু আল-কুরআনে উল্লেখ আছে যে, এটাই সর্বশেষ ও চুড়ান্ত ধর্মগ্রন্থ। লিখা থাকাটাই তো যথেষ্ট নয়, তবে এ কথাটির গুরুত্ব দেয়া জরুরী হয়ে যায় যদি আমরা দেখি যে, আল-কুরআন অবিকৃত এবং সৃষ্টিকর্তার বাণী।

দাবী৫:

আল-কুরআন সৃষ্টিকর্তার বাণী।

পর্যালোচনা/যাচাই:

"আল-কুরআন সৃষ্টিকর্তার বাণী" একথার প্রমাণ কি? এর অনেক অনেক প্রমাণ রয়েছে। খুব সংক্ষেত্রে কয়েকটির উল্লেখ করছি এখানে। (ক) আল-কুরআন বলছে, এর (আয়াতগুলো) অপরিবর্তি থাকবে, আর সেটা বজায় আছে। (খ) আল-কুরআনে উল্লিখিত অনেক অনেক তথ্য সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আল-কুরআনের কোনো তথ্য আজ পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয়নি। যেমন: (ক) মানব মানব ভ্রুণের শুরুর অবস্থাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা। (খ) চাঁদের আলো তার নিজের আলো নয়, প্রতিফলিত আলো। (গ) সূর্য-পৃথিবী এসব গ্রহগুলো নিজের অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। (ঘ) বিশ্বজগত প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ইত্যাদি। এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখেছি অন্য একটি উত্তরে, অনুগ্রহ করে সেই উত্তরটি দেখুন, এখানে: https://bn.quora.com/কুরআনের-আয়াত-যে/answers/258649058

তাহলে, আল-কুরআন অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার বানী। আর, আল-কুরআনের এই কথাও সত্য যে, আল-কুরআন কেন্দ্রীক জীবন বিধান ইসলামই সর্বশেষ এবং চুড়ান্ত জীবন বিধান।

ধর্মকে যাচাই কররো জন্য, যদি আপনার কাছে আরো ভালো যুক্তি থাকে, আমি সেটা জানতে চাই, এবং আমার নিজের ধর্ম "ইসলাম"কে সেই যুক্তি দিয়ে যাচাই করতে চাই।

No comments:

Post a Comment