ইন্টারনেটে এত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা জন্মেছে যে ভারতীয়রা নিজ দেশকে বাংলাদেশের থেকে অনেক বেশি উন্নত মনে করে। সন্দেহ নেই সর্বোপরি ভারত বাংলাদেশ থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছে তবে বাংলাদেশের আশেপাশের ভারতীয় প্রদেশগুলো বাংলাদেশের মতোই বা তার থেকেও অনুন্নত। কিছু ফ্যাক্টর উল্লেখ করলাম যেগুলোতে বাংলাদেশ ভারতের থেকে এগিয়ে রয়েছে
১. জিডিপি গ্রোথ: গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারতের থেকে দ্রুত গতিতে বাড়ছে। আইএমএফ এর হিসাব মতে 2019 সালে রুয়ান্ডার পরে বাংলাদেশী হবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ।https://www.google.com/amp/s/www.thedailystar.net/business/news/bangladesh-second-fastest-growing-economy-imf-1728289%3famp
২. গড় আয়ু: বাংলাদেশ গড় আয়ু বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। বাংলাদেশি মানুষেরা গড়ে ৭২ বছর বাঁচে যেখানে ভারতে তা ৬৮ বছর।
৩. নারীর ক্ষমতায়ন : বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়ে রয়েছে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে। বাংলাদেশে নারীদের মাথাপিছু আয় ভারতীয় নারীদের থেকে বেশি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেমন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার এরা সবাই নারী।
Bangladesh most gender equal country in S Asia
Bangladesh women's income on the rise
৪. হাঙ্গার ইনডেক্স : হাঙ্গার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী ইন্ডিয়া বাংলাদেশ হতে পিছিয়ে রয়েছে। শিশু পুষ্টি, শিশু মৃত্যুর হার এসব সূচকের উপর ভিত্তি করে এই র্যাঙ্কিং করা হয়ে থাকে Redirect Notice
৫. এইচডিআই গ্রোথ রেট : সর্বশেষ এইচডিআই রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশের এইচডিআই গ্রোথ রেট ছিল যুগ্মভাবে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি।ভারতের সাথে ব্যবধান প্রতি বছর কমে আসছে। এইচডিআই নির্ণয়ে মাথাপিছু আয় যদি বাদ দেয়া হয় তাহলে বাংলাদেশের র্যাংকিং ইতিমধ্যেই ভারতের থেকে ভালো। মানব উন্নয়নের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের দৃপ্ত অর্জন
৬. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: যদিও দুই দেশের মানুষই দাবি করে তাদের দেশ ধর্মীয়ভাবে তুলনামূলক বেশি সহিষ্ণু তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভারতের চেয়ে ভালো। পিডব্লিউসি এর সমীক্ষা অনুযায়ী ভারত পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ ধর্মীয় সহিংসতার দেশ যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সারিতে রয়েছে।এছাড়া আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের বাৎসরিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ২৮ টি দেশের মধ্যেও ভারত রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের নাম আসেনি।
On Religious Hostilities, India Ranked Just Slightly Better Than Syria: Pew Study
৭. ফার্টিলিটি রেট : বিশ্বের যে সকল দেশ সবচেয়ে দ্রুত ফার্টিলিটি রেট কমাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। স্বাধীনতার সময় যেখানে বাংলাদেশের ফাটিলিটি রেট ছিল ৬.৯৪ বর্তমানে তা ২.১ এ নেমে এসেছে যা ভারতের থেকেও কম।
Bangladesh fertility rate - Google Search
India fertility rate - Google Search
৮. দরিদ্রতা হ্রাস: বাংলাদেশে দারিদ্রতা দূরীকরণে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে শূন্য হাতে শুরু করা বাংলাদেশে আজ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা প্রায় ভারতের সমান এবং কিছু কিছু সূত্র মতে ভারতের থেকেও কম।
৯. পরিবেশ দূষণ : যদিও পরিবেশ দূষণ দুই দেশের জন্যই একটি মারাত্মক সমস্যা তবে তর্ক সাপেক্ষে ভারত এখানেও খানিকটা "এগিয়ে" থাকতে পারে। বায়ু দূষণে দিল্লি পৃথিবীর সব রাজধানী থেকে "এগিয়ে" আছে (যদিও ঢাকা এই র্যাংকিংয়ে ঠিক ভারতের দিল্লির পরেই)। এছাড়া মাথাপিছু কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ এবং সমুদ্র দূষণেও ভারত বাংলাদেশ থেকে "এগিয়ে" আছে।
Countries Putting The Most Plastic Waste Into The Oceans
New Delhi is world's most polluted capital, Beijing eighth
List of countries by carbon dioxide emissions per capita - Wikipedia
পরিশেষে বলতে চাই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়েই এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ২৪ বছর দেরিতে পাওয়া স্বাধীনতা, তিন গুণ বেশি জনঘনত্ব, মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিবেচনা করলে বাংলাদেশের অর্জন খুব সম্ভবত ভারতের তুলনায় অনেক বেশি চমকপ্রদ। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গরিব এবং নবীনতম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ভারতকে ছাপিয়ে গিয়েছে বা ব্যবধান অনেক কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আশা করি উভয় দেশই খুব দ্রুততার সাথে পৃথিবীর উন্নত দুই দেশের মধ্যে জায়গা করে নিবে। এতক্ষণ কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment