নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় -নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে নিজের মধ্যে জমে থাকা সকল বদ অভ্যাস দূর করতে হবে।
যতক্ষন আমাদের দৈনন্দিন জিবনের বাজে অভ্যাস গুলো আমরা ঝেড়ে ফেলে দিতে না পারবো, এবং আমাদের মস্তিষ্ক তথা মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন যদি সঠিক ভাবে নেয়া না হয়।আমরা ঠিক ততোটাই পিছিয়ে পড়বো।
নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় –সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের প্রত্যেকের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় যে, আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেই না।
আমরা যখন মানসিক ভাবে অসুস্থ থাকি তখন আমাদের মস্তিষ্ক সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। যা আমাদের সাভাবিক জীবন-যাপনে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
কিভাবে আপনার মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে পারেন?
কিভাবে আপনি মানসিক ভাবে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারেন?
আপনার মনেও যদি এই প্রশ্ন গুলি উঁকি দিয়ে থাকে, তাহলে বলতেই হয় আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমরা কথা বলবো আপনার মস্তিষ্ক বা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বদ অভ্যাস গুলি বাদ দিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় নিয়ে-
আরো জানুন- ইসলাম মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কী বলে?
তাহলে চলুন জেনে নি আমাদের মস্তিষ্ক বা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বদ অভ্যাস গুলো দূর করে নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় সম্পর্কে!
#১- সকালে নাস্তা না করা
আমাদের অনেকেরই এই বদ অভ্যাস টা আছে। আপনি আপনার ডানে-বামে তাকালেই দেখতে পাবেন যে, আপনার পরিচিত কেউ না কেউ নিয়মিত এই বদ অভ্যাস টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, যারা মধ্য-বয়সী মেসে থাকে (ব্যাচেলর) তাদের এই বদ অভ্যাস টি বেশি থাকে। এটি শুধু আমাদের মস্তিষ্কেই প্রভাব বিস্তার করে না। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে ও অনেক ক্ষতিকর।
নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই ছোট ছোট বিষয় গুলোই আমাদের জিবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
#২- রাতে দেরি করে ঘুমানো
আপনি মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলে প্রথমেই ডাক্তার সাহেব আপনাকে জিজ্ঞেস করবে আপনার রাতের ঘুম সঠিক ভাবে হচ্ছে কিনা। ইদানিং আমরা এই ভুল টি খুব বেশি করছি। আমরা প্রতিনিয়ত দেরি তে ঘুমাই এবং দেরিতে ঘুম থেকে উঠি।
এই সমস্যা আমাদের মস্তিষ্ক, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই বিপজ্জনক। আপনি যদি এটি পরির্তন করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার কাজের অগ্রগতি অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
#৩- অনলাইন আসক্তি– নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়
আপনি যখন উপরের এই ৩ নাম্বার পয়েন্ট টি দেখলেন, সাথে সাথেই হয়তো বা আপনি একমত পোষণ করেছেন। আচ্ছা আপনি ও কি এই একই সমস্যায় ভুগছেন?
অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন কোন একটা উদ্দেশ্যে অনলাইনে ৮-১০ ঘন্টা বা তারও অধিক সময় ব্যয় করেন। হা বলছি ফ্রীল্যান্সার বা যারা অনলাইন বিজনেস করছেন তাদের কথা। এটাকে অবশ্যই আপনি অনলাইন আসক্তি বলতে পারেন না।
তাহলে অনলাইন আসক্তি কাকে বলে?
জ্বি আমরা অনেকেই আছি, আচ্ছা অনেকের কথা বাদ দিয়ে আপাততো আমার নিজের কথাই বলি। আমিও একটা সময় এমন ছিল যে কোন কারণ ছাড়াই ফেসবুক,ইউটিউবে ঢুকে অযথাই ব্রাউজিং/স্ক্রোলিং করতাম।
হয়তোবা ভিডিও দেখতাম নয়তো বা ফেসবুক ফ্রেন্ডস বা রিলেটিভ দের প্রোফাইলে ঘুরতাম।
একটা সময় এসে আমি আমার এই বদ অভ্যাস টি পরিবর্তন করতে পেরেছি। নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
#৪- ধূমপান থেকে বিরত থাকা- নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়
মস্তিষ্ক সহ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির একাধিক ক্ষতিকারক প্রভাব সহ ধূমপানকে সমস্ত অভ্যাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধূমপানের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার সহ আরো নানা রোগ হবার আশংকা থাকে।
আপনি চাইলেই এই অভ্যাস টি একদিনে পরিবর্তন করতে পারবেন না। আপনাকে ধীরে ধীরে এই বাজে অভ্যাসটি পরিবর্তন করতে হবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে যে ধূমপান আপনার মস্তিষ্ককে সঙ্কুচিত করতে পারে এবং আলঝেইমার রোগের মতো গুরুতর স্বাস্থ্যগত অবস্থার দিকেও নিয়ে যেতে পারে।
#৫- ইচ্ছাকৃতভাবে প্রস্রাব আটকে রাখা
এই কাজ টা আমরা সকলেই কম বেশি করে থাকি। আপনি নিজেও জানেন না এই সমস্যা আপনার জন্যে কতটা বিপজ্জনক। যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা এই কাজ টা মোটেও করবেন না।
আপনি যখন জোর করে প্রস্রাব আটকে রাখবেন, সাভাবিক ভাবেই আপনার মস্তিষ্কের উপর অনেক চাপ পড়ে। তাই মস্তিষ্ক ঠিক রাখতে এটি এড়িয়ে চলুন।
আপনি হয়তো বা মনে করতে পারেন যে এটি একটি সাধারণ সমস্যা। তবে এটি কোন সাধারণ সমস্যা নয়। তাই আপনার এমন কোন বদ অভ্যাস থাকলে পরিবর্তন করুন।
#৬- অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া
মিষ্টি জাতীয় খাবার আপনি খেতেই পারেন। কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না। আর অতিরিক্ত মিষ্টি তো স্বাস্থের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত মিষ্টি মস্তিষ্কের ক্ষতির পাশা-পাশি চোখের সমস্যার জন্যেও দায়ী। নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় গুলোর মধ্যে এটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মিষ্টি দেখলেই আমরা আমাদের খাবারের প্রতি লোভ সামলে রাখতে পারি না।
ইদানিং দেখা যায় যে ছোট ছোট বাচ্চারা চোখে ঝাপসা দেখার কারণে চশমার শরণাপণ্য হতে হয়। তাই বিশেষ করে বাচ্চা দের মিষ্টি কম খাওয়ানো উচিত।
আরো জানুন- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সেরা ১৮ টি বাংলা হেলথ টিপস
#৭- খাওয়ার সময় টিভি বা মোবাইল দেখা
সব কিছুরই নিয়ম আছে, আমাদের সুস্থ্য সুন্দর স্বাভাবিক জীবনের জন্যে নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। আমাদের প্রত্যেক জিনিস বা কাজের জন্যে সময় নির্ধারণ করে রাখা উচিত।
তাহলে আমাদের মস্তিষ্ক বিশ্রাম পাবে, আমরা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে যাবো।
বিশেষভাবে বলা যায় যে, এখনকার বাবা-মা তাদের সন্তানদের খাবার খাওয়ানোর সময় মোবাইলে কার্টুন চালিয়ে খাওয়ায়। যা বাচ্চাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। এসব অভ্যাস গড়ে তোলা যাবে না। আর আপনি যদি ইতিমধ্যেই এমন সমস্যায় পড়ে থাকেন তাহলে এখনই এই বদ অভ্যাসটি পরিবর্তন করুন।
#৮- মাথায় ক্যাপ অথবা মোজা পরে ঘুমানো
বিশেষ করে শীতকালে আমরা এই ভুলটা বেশি করে থাকি। এটি আমাদের মস্তিষ্কের জন্যে ক্ষতিকারক।
টানা কয়েকদিন মোজা কিংবা ক্যাপ পরে ঘুমানোর কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। যদি আপনি এই কাজ নিয়মিত করেন তাহলে মাথা ব্যাথা আরো তীব্র হতে পারে। তাই আপনার যদি এমন কোন বদ অভ্যাস থাকে তাহলে এটি অবশ্যই পরিবর্তন করুন।
#৯- বেশি পরিমাণে চিনি গ্রহণ
আমাদের জীবনে প্রতিটি সম্ভাব্য অসুস্থতার শীর্ষস্থানীয় অপরাধী হিসাবে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবারই বেশিরভাগ সময় দায়ী থাকে।
দুঃখের বিষয় হলো, এটি আমরা খেতে বা পান করতে বেশি পছন্দ করি।
গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানো সেলুলার স্তরে পুষ্টির শোষণকে হ্রাস করে।
প্রকৃতপক্ষে, সঠিক পুষ্টির অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলি মরে এবং ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পারে।
#১০- ব্যায়াম থেকে বিরত থাকা
নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীর কে সুস্থ এবং ফিট রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি আমাদের মানসিকতার উন্নতি এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।
আপনি যদি স্বাভাবিক ভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে, নিয়মিত ব্যায়াম করা একজন মানুষ- ব্যায়াম না করা লোকদের থেকে বেশি আত্মবিশ্বাসি ও পরিশ্রমী হয়ে থাকে। তাই নিজের মানুসিকতার উন্নতি বা নিজের কাজের গতি বাড়াতে চাইলে আজ থেকেই ব্যায়াম করা শুরু করুন।
আরো জানুন- পেটের চর্বি কমানোর ৯টি সহজ ও কার্যকর উপায়
ব্যায়াম হলো নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা- নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়
সর্বোপরি বলা যায় যে, নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় মানে নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে সবার আগে নিজের দেহ বা শরীর কে প্রাধান্য দিতে হবে। সবার আগে সুস্থ্যতা প্রয়োজন।
আমাদের মস্তিষ্কে চাপ পড়ে এমন কোনো কাজ করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। আপনি যখন মানসিক ভাবে সুস্থ্য থাকবেন, তখন দেখবেন যে আপনার জিবনের প্রতিটি স্তরে কাজের গতি কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment