জীবনে ভ্রমণ এত দরকারি কেন?
আমাদের জীবন একটাই। বাড়ী আর অফিস , শুধু রান্না আর বান্না করে এই জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া কি উচিত ? জীবনটা একঘেয়ে হয়ে যাবে না ? চারপাশে একই মানুষ, একই জায়গা, সেই একই বাস স্ট্যান্ড , একই অফিস আর মেয়েদের জন্য সেই রোজের ডাল বানাও আর টিফিন তৈরি করো । তারচেয়ে মাঝেমধ্যে যদি একটু ঘুরতে যাওয়া যায় তাহলে এই একঘেয়েমিটা কমবে না ?
ভ্রমণ বা বাইরে ঘুরতে যাওয়া ভীষণ জরুরি। পৃথিবীতে কত কিছু আছে, কত রকমের মানুষজন আছে, ডাল ভাত আর মাছ ভাত ছাড়া আরো কত কিছু খাবার আছে..সেগুলো দেখতে, চাখতে হবে না ?
ভ্রমণের কিছু ফায়দা শুনুন। শুধু টাকা নেই নেই আর টাকা গেল গেল করলে চলবে না। নিজের সামর্থ্যের মধ্যে যত জায়গায় বেড়ানো যায় বেড়িয়ে আসুন।
ভ্রমণের সুফল :-
- আপনি যে এই দেহটি নাড়িয়ে বেরোতে পারলেন সেটাই একটা বিরাট পজিটিভ দিক।
- কোথাও যাওয়ার আগের যে প্ল্যানিং ..সেটা কত ইন্টারেস্টিং ভাবুন তো। কোথায় যাবেন, কখন যাবেন, কি করে যাবেন …এই উত্তেজনাগুলো আপনার প্রেসার সুগার কমিয়ে দেবে।
- দুনিয়ার চিন্তা কিছুদিনের জন্য কমে যায়।
- আপনি একবার কোথা থেকে ঘুরে এলেই দেখবেন নিজেকে কেমন স্মার্ট স্মার্ট লাগছে। আপনি আপনার পরিচিতির বাইরে গিয়ে দু চারদিন কাটিয়ে এসেছেন। একদম অপরিচিতদের সাথে কথাবার্তা বলেছেন। এমনও হতে পারে আপনি বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেছেন। সেই জায়গাটা সম্পর্কে জেনেছেন এবং আগামীতে হয়তো আপনিই অন্য একজনকে জায়গাটা ঘুরে আসতে গাইড করবেন।
- ঘুরতে গেলে কত ধরণের অভিজ্ঞতা হয়। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে পরিণত করবে।
- অনেক হাঁটা হয়। পাহাড়ে চড়া, সমুদ্র স্নান , রোদ বৃষ্টি, শীত, বরফ ইত্যাদির মতো নানান কারণে বেশ একটা এক্সারসাইজের মতো হয়। শরীরের জং ধরা নাট বল্টুগুলো একটু সতেজ হয়। শরীর তরতাজা লাগে।
- নানান সংস্কৃতির সাথে পরিচয় হয়। অনেক অজানা জিনিস দেখে, জেনে মন আনন্দে ভরে ওঠে।
- আপনি এতদিন যা ছবিতে দেখেছেন বা লোকের মুখে শুনেছেন সেটা সত্যি হয়ে আপনার চোখের সামনে ধরা দেবে। ধরুন..ছবিতে শুধু বরফ দেখেছেন। সেই আপনি জ্যাকেট, গামবুট আর সানগ্লাস লাগিয়ে বরফের গোলা বানিয়ে ছোড়াছুড়ি করছেন। শাহরুখ খান মনে হবে না নিজেকে ? যান একটু হিরোগিরি করে আসুন।
- আপনি যখন বেড়াতে যাবেন নিজেই নিজের অনেক কিছু আবিষ্কার করবেন। আপনি হয়তো জানেনই না যে আপনি অমুক কাজটা করতে পারেন বা আপনি এতো সাহসী বা আপনি এত ধৈর্য্যশীল ।
- ভ্রমণ মানুষকে অনেক অ্যাডভেঞারাস বানায়। বিভিন্ন স্পোর্টস যেমন…প্যারাগ্লাইডিং, স্কুবাডাইভিং, নানান ওয়াটার স্পোর্টস , বাঞ্জি জাম্প , ট্র্যাকিং, মাউন্টেনিয়ারিং, স্কীয়িং ইত্যাদির স্বাদ ওঠানো যায়।
- ভ্রমণ আপনার পরিবারের সাথে বা বন্ধুদের সাথের সম্পর্ক আরো মজবুত বানায়। কিছুদিন দিনরাত পরিবারের সাথে বা বন্ধুর সাথে কাটালে আপনি ওদের সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন যেগুলো আপনি হয়তো আপনার ব্যস্ততার জন্য মিস করে গেছিলেন।
- অনেক জ্ঞান বাড়ে। কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকলে চলবে ? সব দেখলে জানলে মানসিক উন্নতি ঘটে..মানুষ অনেক উদার হয়..কুসংস্কার কমে।
- আর খাওয়া দাওয়া? কত ধরণের খাবার উপভোগ করা যায়। বাড়ীর এক ধরণের খাওয়া থেকে মুক্তি । অন্য স্বাদের খাবার আমাদের অসাড় জিভে একটু হলচল আনে। আর বাড়ীর মহিলাদেরও একটু রেহাই। চা টা অব্দি কেউ বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। খেতে বসলে কেউ জল দিয়ে যাচ্ছে, কেউ খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছে..কি আনন্দ হয় ভেবে দেখুন তো। বাড়ীর মহিলাদের তো সারা বছর নিজের খাবার নিজেরই বানাতে হয়..নিজেকে নিয়েই খেতে হয়। বেড়াতে গেলে ওদেরও একটু আরাম হয়।
- সব সেরে আপনি যখন বাড়ী ফিরছেন ..দেখবেন বাড়ীটাকে কি ভালো লাগে। বুঝতে পারবেন আপনার বিছানা, আপনার বারান্দা, আপনার চেনা পরিবেশ সব কিছুকে আপনি কতটা ভালবাসেন। তাই বলছি বাড়ীকে মিস করার জন্য একটু বাড়ী থেকে বের হোন।
- ভ্রমণের সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো …একবার বেড়াতে বেরোলে আবার বেরোতে ইচ্ছে করে…বারবার ইচ্ছে করে। ভ্রমণ একধরণের নেশা…নেশা ঠিকই কিন্তু দুর্দান্ত একটা ভালো নেশা… স্বাস্থ্যকর নেশা। এই নেশায় ডুবে যান।
*** ওপরে কিছু ছবি দিলাম। ওসব জায়গাতেই যেতে হবে এমন কোন কথা নেই আগেই বলে রাখলাম। সুন্দর ছবি দিলে সুন্দর লাগে তাই দিলাম।
No comments:
Post a Comment