Sunday, December 20, 2020

কোন ছোট ছোট জিনিস দেখে মানুষের অনেক কিছু বোঝা যায়


ছোট ছোট জিনিষ, অনেক বড় কিছুর আভাস দিয়ে যায়।

১। শপিং মলের কর্মীর সাথে, হোটেলে ওয়েটার এর সাথে, অটো চালক, রিক্সা চালকের সাথে, রাস্তার ফুটপাথে বসা দোকানদারের সাথে, একজন কীভাবে কথা বলেন, সে থেকে তাঁর শিক্ষা, ভদ্রতা সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝা যায়।

আমার সাথে পরিচিতির সুবাদে, তাঁর সৌজন্যপূর্ন এবং মধুর ব্যবহার, তাঁর সম্পর্কে শেষ কথা না ও বলতে পারে।

২। পোষাক, পরিচ্ছদের স্টাইল বা ধরণ, তাঁর রুচিবোধ সম্পর্কে বার্তা দেয়।

৩। অনেকসময়ই আমরা বলি, আমার কলেজ, আমার অফিস, ইত্যাদি। এখানে আমি এবং আমাদের, এ দুটো প্রয়োগ, তাঁর মানসিক ভাবের প্রতিফলন ঘটায়।

৪। ফার্মেসী থেকে ঔষধটি, বিশেষ করে, 'ওভার দি কাউন্টার' জাতীয় মেডিসিন, যার জন্য প্রেসক্রিপশনের দরকার হয় না, কেনার সময় যখন দোকানের কর্মী, ঔষধের ভ্যালিডিটি আছে জানার পর ও, গ্রাহককে দেয়ার আগে, একবার এক্সপায়ারী ডেটের দিকে তাঁর চোখ বুলিয়েই নেন, তাঁর দায়িত্ববোধ সম্পর্কে বুঝা যায়।

৫। এরকম ও দেখা যায়, কোনো প্রয়োজনে ইঞ্জেকশন নেয়ার সময়, যিনি ইঞ্জেকশন দিতে আসেন, তিনি বলে উঠেন, "কিচ্ছু না, কিচ্ছু না, পিঁপড়ার কামড়ের চাইতে ও কম ব্যাথা লাগবো, একদমই টের পাইবেন না, "।

এবং এটা লক্ষ্য করেছি, যিনি ইঞ্জেকশন দিতে আসেন, তিনি, যিনি ইঞ্জেকশন নিতে ভয় পান, যিনি ভয় পান না, দুজনকেই এই কথাটি বলে যেন একটু আশ্বস্ত করতে চান, তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই, কথাগুলি বলে যান।

খুবই ছোট বিষয়, কিনতু, এরককম যিনি করেন, তাঁর সহানুভূতি প্রবণতাকে, অস্বীকার করতে পারি না।

৬। খাওয়ার ধরণ দেখে অনেক কিছু বুঝা যায়।

যিনি খুবই দ্রুত খেয়ে নেন, বলা হয় তিনি নিজের লক্ষ্যে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকুন, যিনি ধীরে সুস্থে খান, তিনি, খুবই ভেবে চিন্তে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষপাতী।

৭। প্রথম পরিচয়ে যিনি, অন্যের নাম ধাম জিজ্ঞেস করেই থেমে যান, তিনি একটি স্বাভাবিক সম্পর্কে আগ্রহী।

কিনতু, যিনি, নাম ধাম জিজ্ঞেস করেও, পূর্বপুরুষের জন্মভিটের অনুসন্ধানে আগ্রহী, বাড়ী না ফ্ল্যাট, আবাসনে কতগুলো ফ্ল্যাট, কবে কেনা হয়েছে, কত স্কোয়ার ফিট, কতো পড়লো, এসব বিস্তৃত অনুসন্ধানে আগ্রহী, তিনি সম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটু বিশ্লেষণ ধর্মী।

৮। হাঁটার ধরণ দেখে, অনেক কিছুই বুঝা যায়।

আমাদের পাড়ায় নতুন বাড়ী করে এলেন এক ভদ্রলোক। তাঁর হাঁটার ধরণ, অনেকটাই ছন্দবদ্ধ। অনেকটাই মেয়েদের হাঁটার ধরণের মত। (ছেলে এবং মেয়ের হাঁটার ধরণে, কিঞ্চিৎ লক্ষণীয় পরিবর্তন রয়েছে)।

যাক, গৃহ প্রবেশের দিন নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আমরা তাঁর বাড়ীতে গিয়ে, পরিচয় পর্বের প্রসঙ্গে জানতে পেলাম, তিনি পেশাগতভাবে একজন নৃত্যশিল্পী তথা নৃত্য শিক্ষক।

পেশাগত প্রভাব ও হাঁটার ধরণে, সর্বক্ষেত্রে না হলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হতে পারে।

৯। মুদ্রা দোষ : কথা বলতে, বলতে, বা চুপ থাকা অবস্থায়, দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানোর অভ্যাস।

স্বাস্থ্য সম্মত অভ্যাস নয়।

কিনতু, যদি কেউ এরকম করেন, বলা হয়, তিনি নিজের ভাবনা চিন্তা বা প্ল্যানিং, অন্যের সাথে শেয়ার করতে চট করে রাজী নন এবং তিনি, সব কিছুতেই পারফেক্ট হওয়ার চেষ্টা করেন, বা বলা যেতে পারে, পারফেকশনিস্ট।

১০। মোবাইলের প্যাটার্ন লক। এটি একটি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। কেউ প্যাটার্ন লক টি সহজভাবে করেন, কেউ খুবই জটিলভাবে।

যিনি খুব সহজভাবে সেটা করেন, বলা হয়, তিনি অন্যের উপর পূর্ণ ভরসায় নিশ্চিত থাকেন। যিনি প্যাটার্ন লক খোলার ধরণ খুবই জটিল করেন, তিনি অন্যের উপর ভরসা করেও, পূর্ণ নিশ্চিত বোধ করেন না এবং কাউকে ভরসা করেও, একটি বিকল্প ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখায় উৎসাহী থাকেন।

১১। অনেক সময় ভুল নাম্বারে আমরা ফোন করে ফেলি। যখন বুঝি, ওটা ভুল নাম্বার, ফোন কেটে দিই।

অনেকসময়, বলি, ভুল হয়ে গেছে বা সরি, ভুল হয়ে গেছে। এটি একটি স্বাভাবিক, সৌজন্যবোধ। কিনতু, ওদিক থেকে যখন কেউ বলে উঠেন, ঠিক আছে, বা it's alright, বুঝা যায়, সৌজন্যবোধ, ভদ্রতা এসবকে তিনি, জীবনে খুবই গুরুত্ব দেন।

১২। দূরে কোথাও যাওয়ার সময়, এয়ারপোর্টে বা রেলস্টেশনে পৌঁছে ক্যাব বা অটোরিক্সা থেকে নেমে, ক্যাব বা অটো চালককে ধন্যবাদ জানানোর পর, প্রত্যুত্তরে, তিনি ও ধন্যবাদ জানান। শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ থেকেই অমন হয়।

কিন্তু, ধন্যবাদের প্রত্যুত্তরে, যখন একদমই অচেনা ক্যাব, অটো চালক, ধন্যবাদ বলে, পেছনে জুড়েই দেন, "সহি সালামত পৌঁছ যাইয়ে", তখন নিজে থেকেই আমার দু'হাত, তাঁর উদ্দেশ্যে কপালে উঠে আসে। কারণ, আমার কাছে, তিনি অন্যের মঙ্গলকামী।

১৩। এটা আমি অনেক সময়ই লক্ষ্য করেছি, কারো বাড়ীতে গেলে, যদি সেই বাড়ীতে কোনো বাচ্চা, হয়তো নার্সারী স্কুলে পড়ে, বাচ্চাটির মা, বাবা, তখন ওই বাচ্চাটিকে ডেকে এনে বলেন, "একটা ছড়া বা কবিতা শোনাও তো"।

বাচ্চাটি, হয়তো স্বেচ্ছায় বলতেই চাইছে না, একদমই অপরিচিত অতিথিকে দেখে হয়তো লজ্জা পাচ্ছে। মা, বাবা, বারবারই বলতে থাকেন, "শোনাও, আঙ্কেল কে গানটা শোনাও, তোমাকে চকলেট দেবো"। কিনতু, বাচ্চাটি রাজী হচ্ছে না। তখন, তাঁরা (মা, বাবা) শিশুটিকে, বলে উঠেন, "শোনাবি কবিতাটা, নাইলে, মার দেবো".

ভয়ে, ভীতিতে, হয়তো বাচ্চাটি কোনোমতে কবিতাটা শুনিয়ে, ওখান থেকে পালিয়ে যায়, ভাবে, কবিতা বলতে পারি বলেই তো এই বিপদ, বাড়ীতে আর কোনোদিনই কবিতা, গান, এসব শোনাবই না।

বুঝা যায়, শিশুটির অভিবাবক, শিশু মন বুঝতে, চুড়ান্তভাবেই ব্যর্থ।

কেন যে অমন করেন, তাঁরা ?

১৪। অনেকেই বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা না করার জন্যে, বাধ্য হয়েই, বাংলা কথার মাঝে ইংরেজী শব্দ যোগ করেন।

কিনতু, এমন ও দেখা যায় যে অনেকে বাংলা ভাষা ভালো করে জেনেও এবং যাঁর সাথে কথা বলছেন, তাঁর ও বাংলা বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই, সেটা জেনেও, বাংলা বলার মাঝে, মাঝেই, ইংরেজীতে বলেন।

আমি বলছি সে সব পরিস্থিতির কথা, যেখানে বাংলাভাষী দুজনের মাঝে, বাদ, বিবাদ, ঝগড়া ঝাঁটি, তর্কাতর্কির সময়, কঠিন, কঠিন, ইংরেজী শব্দের অবতারণা হয়।

এর দ্বারা বুঝা যায়, তিনি, নিজেকে জাহির করার একটা সুপ্ত ইচ্ছা, নিজের হৃদয়ে লালন করেন।

১৫। মাছ বাজারে গিয়ে যদি কাউকে দেখা যায় যে, হেলতে, দুলতে, নানারকম মাছ দেখে, দরদাম করার মাঝেই, হঠাৎ করেই তিনি বাজারের অন্য কোনো দিকে দ্রুত গতিতে ধাবমান, এমন কী, সামনে কেউ পড়লেও তাঁকে প্রায় ধাক্কা মেরেই, ওদিকটায় ছুটে যাচ্ছেন, বুঝা যায়, বুঝাই যায়, তিনি বাঙালী।

কেমন করে ? কারন, ওইদিকটায় বিক্রি হচ্ছে,

ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment